বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভেস্তে গেল আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টা

ভেস্তে গেল আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টা

কয়েক বছর ধরেই তুরস্ক থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নানা চেষ্টা তদবির করে আসছে। তার সফলতাও দেখা যাচ্ছিল। চলতি মাসেই সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছিলেন, তাদের দুই দেশ ‘প্রতিদিনই একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ’ হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সালমান দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা উল্লেখও করেননি। তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন চুক্তি ‘ফিলিস্তিনিদের প্রয়োজন মেটাবে ও তাদের একটি ভালো জীবনের নিশ্চয়তা  দেবে। এর কয়েকদিন আগে মিসর ও তুরস্কও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশলও ঘোষণা করেছিলেন। তবে হঠাৎ করেই সেই প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে প্রক্রিয়া চলছিল তার পরিবর্তে এখন ফিলিস্তিনিদের প্রতি নতুন করে আরবদের সমর্থন দেখা যাচ্ছে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। ফলে ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনিদের বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে আসা যে, হামাসের একটি বড় সাফল্য- সেটা বললে অত্ত্যুক্তি হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ অনেক দেশ ইরানসমর্থিত হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের নন- রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো রিচার্ড লেব্যারন সংস্থার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, হামাসের হামলা সৌদিদের একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। সেটি হচ্ছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের ইস্যুটি শুধুই একটি ‘সাবটপিক’ অর্থাৎ উপ-বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।’ ‘এই হামলা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়ে পরিবর্তন আনবে,’ বলে মনে করেন তিনি। আটলান্টিক কাউন্সিলের ‘স্কোক্রফট মিডলইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের’ পরিচালক জনাথন পানিকফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে অদূর ভবিষ্যতে অগ্রগতি হবে, এমনটা আশা করা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের অভিযানে গাজায় অনেকের মৃত্যু হলে এবং সেখানে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চললে সেটি সম্ভব হবে না, বলে মনে করেন তিনি।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের গবেষণা ফেলো হিউ লোভাট ডয়চে ভেলেকে বলেন, তার বিশ্বাস ‘আরব বিশ্বের জনগণের মতামত- যার বেশিরভাগই ইসরায়েলের প্রতিকূল- সেটি ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার কারণে আরও বাড়বে।’

এদিকে, ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে। তবে সরাসরি হামাসের কর্মকান্ডের সমালোচনা করেনি বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম বুমবার্গ।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা : শুধু আরব বিশ্বের চাপ নয়, সৌদি আরব ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগোবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার দিকেও নজর রাখবে। এ বছর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা দেখা গেলেও মিত্রদের প্রশ্নে এখনো দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে সৌদি আরব আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ২০১৮ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। ওই বছর সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং মার্কিনিদের তত্ত্বাবধানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণেরও অনুমতি আশা করছে সৌদি আরব।

আটলান্টিক কাউন্সিলের পানিকফের ধারণা, সৌদি আরবের বিশ্লেষকদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের কাছাকাছিও নয়। ফলে ইসরায়েলের মতো দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হলে সৌদি আরবে কত প্রাণহানি ও ধ্বংস হতে পারে, তা ভাবতে পারেন সৌদি বিশ্লেষকেরা। সে কারণে হয়তো সৌদি আরব আবারও ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে, বলে মনে করছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর