শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজায় মানবিক বিপর্যয়

লাশ রাখার জায়গা নেই হাসপাতালে

গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ফিলিস্তিনি গাজা ছাড়ছে। গতকাল নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আগে ফিলিস্তিনিরা ভি চিহ্ন দেখায় -এএফপি

ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে প্রায় ৬ হাজার বোমা ছোড়া হয়েছে, আর এসব বোমার ওজন প্রায় ৪ হাজার টন। ইসরায়েলের এসব বিমান হামলায় প্রতি মুহূর্তে কেঁপে উঠছে গাজা উপত্যকা। শত শত বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। প্রতি মুহূর্তে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল, হাসপাতালে বাড়ছে আহত মানুষের সংখ্যা। ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত গতকাল সাত দিনে গড়িয়েছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎহীন অবরুদ্ধ গাজা প্রতি মুহূর্তে কেঁপে উঠছে ইসরায়েলি বিমান হামলায়। গাজায় সবচেয়ে বড় আল শিফা হাসপাতাল। এর মর্গে উপচে পড়ছে ফিলিস্তিনিদের লাশ। করিডোরেও স্থান নেই। সেই লাশের সারি এখন পার্কিং এলাকায়। আত্মীয়রা লাশ শনাক্ত করার আগেই দ্রুততার সঙ্গে আসছে আরও লাশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বেচ্ছাসেবকরা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।

ধ্বংস করে দেওয়া ভবন থেকে প্রতিক্ষণই বেরুচ্ছে লাশ। আল শিফা হাসপাতাল একবারে প্রায় ৩০টি লাশ হ্যান্ডেল করতে পারে। কিন্তু তার চেয়ে তিনগুণ চারগুণ লাশ আসছে। ফলে মর্গের করিডোরে রাখা হচ্ছে। আল শিফা হাসপাতালের একজন নার্স আবু ইলিয়াস শোবাকি বলেন, লাশ বহনকারী ব্যাগ আসছে তো আসছেই। এখন এ হাসপাতাল যেন একটি গোরস্থানে পরিণত হয়েছে। আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। শরীর আর কাজ করছে না। এ পরিস্থিতি আরও কত ভয়াবহ হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা বাদ দিয়েছি। এখন লাশের সারি পার্কিং এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় এরই মধ্যে কমপক্ষে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগই নারী ও শিশু। গাজার মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ অর্থাৎ কমপক্ষে ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বেসামরিক হতাহত এড়াতে হামাসের অবকাঠামো টার্গেট করে হামলা চালানোর দাবি করছে ইসরাইল। তাদের এ দাবিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন। এসব মৃত্যু এবং আহতদের নিয়ে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ ভয়াবহ এক পরিস্থিতিতে পড়েছে। শিফা হাসপাতালের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবু সেলিম বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে এ কাজ অব্যাহত রাখা অসম্ভব। রোগীরা এখন অবস্থান করছেন রাস্তায়। আহতরা রাস্তায়। তাদের জন্য একটি বেডের ব্যবস্থা করতে পারছি না আমরা।

ইসরায়েলকে হুমকি ইরানের : বস্তুত ইসরায়েলকে যেমন অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দুনিয়া, তেমনি ফিলিস্তিনকেও সাহায্য করছে ইরান, লেবানন, তুরস্কসহ একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র। গাজায় হামাস গোষ্ঠীকে খতম করতে লাগাতার বোমাবাজি করে চলেছে ইসরায়েল। এহেন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে চরম হুঁশিয়ারি দিল ইরান। ইরানের হুমকি, যদি গাজায় ইসরায়েল বোমাবাজি বন্ধ না করে, তা হলে অন্য মঞ্চে যুদ্ধ শুরু হবে।

প্রস্তুত হিজবুল্লাহ : ইসরায়েলের উত্তরের লেবানন সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই লেবানিজ গেরিলা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যোগ দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এতে চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নতুন দিকে মোড় নেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিবিসি জানায়, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান গতকাল লেবানন সফর করে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধাপরাধের পাল্টা জবাব প্রতিরোধের অক্ষ থেকে নিঃসন্দেহে একযোগেই দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর