রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিবিসিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট

ইসরায়েলকে অবশ্যই নারী শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে

ইসরায়েলকে অবশ্যই নারী শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ

হামাসের হামলার পর ফ্রান্স জোর গলায় ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। বলেছিল, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার সব অধিকার আছে। তবে এবার হঠাৎ করে ভিন্ন সুর বেজে উঠল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কণ্ঠে। ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় নারী ও শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে। গাজায় বোমা হামলার কোনো যুক্তি নেই এবং সেখানে যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েল উপকৃত হবে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। গতকালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, হামাসের ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ‘স্পষ্টভাবে নিন্দা’ করছে ফ্রান্স। কিন্তু ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ‘গাজায় ইসরায়েলের এই বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা’। যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশের নেতারা তার এই যুদ্ধবিরতির আহ্বানে যোগ দিক- এটা তিনি চান কি না জানতে চাইলে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, আমি আশা করি আমার আহ্বানের তারা যোগ দেবে। গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে প্যারিসে মানবিক সহায়তা সম্মেলনের পরের দিন বিবিসিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, প্যারিসের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত সব সরকার এবং সংস্থা ‘স্পষ্টভাবে এই উপসংহারে’ পৌঁছেছে যে, ‘গাজার সংঘাতে প্রথমে মানবিক বিরতি এবং সেখান থেকে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই। আর সেটি হলে সেসব বেসামরিক নাগরিকের সুরক্ষার সুযোগ দেওয়া যাবে। যাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই’। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, বেসামরিক লোকদের ওপর বোমা হামলা করা হচ্ছে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধ মানুষকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে। তাই এটি চলার কোনো কারণ নেই এবং এই হামলাকে বৈধতাও দেওয়া যায় না। আমরা ইসরায়েলকে হামলা থামানোর জন্য অনুরোধ করছি।’ মূলত গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনো অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়িঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে। অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনির মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি শিশু। এছাড়া নিহতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাও ৩ হাজারের বেশি।

এদিকে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড গাজায় বেসামরিকদের মৃত্যু নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও বেসামরিকদের রক্ষায় আরও কিছু করার জন্য তেলআবিবকে চাপ দিচ্ছে। এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোর কাছে এবং আশপাশে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচ সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক গোষ্ঠীটিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যয় নিয়ে গাজায় অবিরাম প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এ সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এবার গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার হামলা নিয়ে সবচেয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। শুক্রবার ভারত সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘অনেক বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে; কয়েক সপ্তাহে অনেক বেশি মানুষ ভুগেছে।’ কিন্তু ব্লিঙ্কেন গাজায় চলা ইসরায়েলের আক্রমণের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘গাজাকে আর সন্ত্রাসবাদ শুরু করার প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’ এ প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের উচিত হামাসের নিন্দা করা, ইসরায়েলের নয়।

সর্বশেষ খবর