মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজা ইস্যুতে নতুন প্রস্তাব দিল মিসর

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে একটি যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় আটক আরও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে একটি নতুন প্রস্তাব রেখেছে মিসর। রবিবার কয়েকটি হিব্রু মিডিয়াকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। এ সময় তেল আবিব প্রস্তাবটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে বা খসড়াটি নিয়ে আলোচনা করা যাবে না এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। তিনটি ধাপে এ চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেছে মিসর। প্রথম ধাপে ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী হামাস ৪০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। আর তৃতীয় তথা চূড়ান্ত ধাপে এসে হামাসের দাবি অনুযায়ী সংঘাত বন্ধে ইসরায়েল বৃহৎ পরিসরের চুক্তিতে সম্মত হবে।

হারেৎজের খবরে বলা হয়েছে, রবিবার এ ধরনের দুটি রূপরেখা ফাঁস হয়। পরে সেগুলো গণমাধ্যমের হাতে আসে। রূপরেখা দুটির বেশকিছু বিষয়ে ভিন্নতা থাকলেও মৌলিক বিষয়গুলো একই।

রূপরেখায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল শত্রুতা বন্ধ ও গাজা উপত্যকা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং এর বিনিময়ে হামাস উপত্যকাটিতে জিম্মি ও অপহৃত ইসরায়েলি সৈন্যদের সবাইকে মুক্তি দেবে। জনসাধারণের আপত্তি সত্ত্বেও হামাস এখনো এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেনি। যতদূর জানা গেছে, ইসরায়েল মনে করে রাজনৈতিক পর্যায়ে এই চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হবে।

তিনটি ধাপে এ চুক্তি বাস্তবায়নের কথা চলছে। প্রথম ধাপে হামাস ৪০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। আর চূড়ান্ত ধাপে ইসরায়েল বৃহৎ পরিসরের চুক্তিতে সম্মত হবে

হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট লেবাননের সংবাদপত্র আল আখবার তিন ধাপের এ চুক্তির বিষয়ে জানিয়েছে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হবে। আর এই সময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে হামাস গাজায় জিম্মি নারী, শিশু, অসুস্থ ও বয়স্কদের মুক্তি দেবে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়টায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে এবং তাদের সৈন্যদের আবাসিক এলাকা থেকে দূরে কোথাও মোতায়েন করবে।

দ্বিতীয় ধাপে হামাস ইসরায়েলি নারী সৈন্যদের মুক্তি দেবে এবং উভয়পক্ষ নিহতদের লাশ বিনিময় করবে।

তৃতীয় ধাপে এসে হামাসের বন্দিদশায় থাকা সব ইসরায়েলি সৈন্যকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজা থেকে সব সেনা সরিয়ে নিয়ে উপত্যকাটির সীমান্তের বাইরে মোতায়েন করবে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধে হামাস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, রূপরেখাটির শুরুর অংশ দেখে উভয়পক্ষই এটি প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা এবং হামাসের ঊর্ধদতন কর্মকর্তাদের সুরক্ষার জন্য গাজায় জিম্মিরা হামাসের কাছে একটি কৌশলগত সম্পদ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত মাসে গাজায় সাত দিনের মানবিক বিরতি চলাকালে উভয়পক্ষই নিজেদের বন্দি বিনিময় করে। চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকে হামাস নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে চলছে। সংগঠনটি বলছে, ইসরায়েলি অভিযান বন্ধের জন্য জিম্মিরা হবে চুক্তির একটি অংশ।

যুদ্ধে চড়া মূল্য দিচ্ছে ইসরায়েল-নেতানিয়াহু : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে চলা যুদ্ধে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য হারে নিহত হচ্ছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। গাজা উপত্যকার প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস দাবি করেছে, বিগত চার দিনে সেখানে ৪৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন ও ৩৫ সামরিক যান ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গত শুক্র ও শনিবারই হামাসের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ১৪ ইসরায়েলি সেনা।

এ পরিস্থিতিতে গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, গত শনিবার ছিল গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলে সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী দিনগুলোর মধ্যে একটি। তবে এরপরও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া ‘কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না’ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রাণহানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘গাজায় চলমান যুদ্ধে খুব কঠিন একটি দিনের পর রবিবার ছিল কঠিন সকাল।’ ইসরায়েলি এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে স্পষ্ট করে বলতে দিন : এটি (গাজায়) দীর্ঘ যুদ্ধ হবে।’

অন্যতম প্রাণঘাতী রাত দেখল গাজা : ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১১ সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম প্রাণঘাতী রাত পার করেছে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড। খ্রিস্টীয় বড়দিনের আগের রাতটিতে সেখানে বিমান হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যিশুর জন্মস্থানের ‘পবিত্র ভূমিতে’ এসব রক্তপাতে প্রবল খেদ প্রকাশ করেছেন রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। মধ্যরাতের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়ে গতকাল খ্রিস্টীয় বড়দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, জানিয়েছে রয়টার্স।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলীয় আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল ব্যাপক বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করেছে।

 

সর্বশেষ খবর