সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইরানেও কি হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র

আপাতত ইরানের অভিজাত কুদস বাহিনীকে টার্গেট করেছে যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলাই চলে। গত পরশু রাতে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড সমর্থিত ৮৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। এ ঘটনা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা আরও প্রবল করে তুলেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

সিরিয়া সীমান্তের কাছে জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শুক্রবার রাতে এ অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মাটিতেও হামলা চালাতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষই জড়িয়ে পড়তে পারে সরাসরি যুদ্ধে। হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে তাৎক্ষণিকভাবে ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে।

মাস পাঁচেক আগে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জর্ডানে গত রবিবারের হামলাই ছিল মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর প্রথম প্রাণঘাতী আঘাত। এতে তিন সেনার মৃত্যু ও আরও অন্তত ৪১ জন আহত হন। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী ‘ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাকের’ যোদ্ধারা এ হামলা চালানোর দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মার্কিন বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়া ও ইরাকে থাকা ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের এলিট বাহিনী কুদস ফোর্স ও তাদের সমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপের সাতটি জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এর মধ্যে চারটি জায়গা সিরিয়ায়, তিনটি ইরাকে। এসব স্থাপনায় সব মিলিয়ে ৮৫টি হামলা চালানো হয়েছে। এতে দূরপাল্লার বি১ বোমারু বিমান এ হামলায় অংশ নেয়। সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে নেওয়া হয় সেগুলো। ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে সব স্থাপনায় একযোগে এ হামলা ‘সফল’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন জেনারেল ডগলাস সিমস। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের জবাব আজ থেকে শুরু হলো। আমাদের পছন্দমতো সময়ে ও জায়গায় এটি চলতে থাকবে।’

ইরাকের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহইয়া রসুল বলেছেন, তাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার মাধ্যমে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে, যা পুরো অঞ্চলের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ইরানেও কি হামলা হবে : মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার চেষ্টা করছে। তবে এ হামলা ততটা জোরালো নয় যে এতে ইরান বা তাদের সমর্থক মিলিশিয়াদের সক্ষমতা কমে যাবে। শনিবার স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানকে সরাসরি আঘাত না করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইচ্ছাকৃতভাবেই উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে চেয়েছেন। তবে আমেরিকান সৈন্যদের ওপর হামলা বন্ধ না হলে তিনি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন। আপাতত তিনি ইরানের অভিজাত কুদস বাহিনীকে টার্গেট করেছেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) এই শাখা এ অঞ্চলে ইরানের সামরিক শক্তির সবচেয়ে শক্তিশালী হাত এবং তেহরানের প্রক্সি মিলিশিয়াদের নেটওয়ার্ক পরিচালনায় নিয়োজিত। তবে এই স্তরের আক্রমণও মার্কিন লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে সরাসরি ক্রমবর্ধমান ইরানি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ওয়াশিংটন অবশ্য আশা করছে, তেমন কিছু ঘটবে না।

স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হলো ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সংযুক্ত ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবে না। তাই আবারও মার্কিন সেনা নিহত হলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সামনে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার নির্দেশ দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লাইসে ডুসেট লিখেছেন, ইরানের মাটিতে সরাসরি আঘাত না করে ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তেহরান ও তার মিত্রদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে যে ‘লালরেখা অতিক্রম করা হয়েছে’। উভয় পক্ষই এটা স্পষ্ট করেছে যে, তারা আরও বিপজ্জনক উত্তেজনা এড়াতে চায়। তবে এমন সংকটময় সময়ে ভুল গণনার ঝুঁকি থেকেই যায়।

যুক্তরাজ্যের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল স্যার রিচার্ড ব্যারনস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ‘নিম্ন স্তরের অশান্তি’ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেছেন, ‘কৌশলগত প্যাটার্ন পরিবর্তন’ না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা বদলের সম্ভাবনা নেই। চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বা গাজা পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

তবে ইরান সংযত আচরণ প্রদর্শন করলেও সুর নরম করেনি। হামলার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শুক্রবার বলেছেন, ইরান যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে কেউ ইরানকে উত্ত্যক্ত করলে দেশটি এর কঠোর জবাব দেবে।

সর্বশেষ খবর