বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
যুদ্ধবিরতি

মার্কিন ইসরায়েল-গাজা নীতি কি বদলাচ্ছে

মার্কিন ইসরায়েল-গাজা নীতি কি বদলাচ্ছে

গাজায় সাড়ে পাঁচ মাসে ৩২ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে ইসরায়েল। এ সময়ে মাঝে কয়েক দিনের বিরতি ছাড়া লাগাতার বোমা বর্ষণ করে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এ সময়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে তিনবার ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে গত পরশু এ যুদ্ধবিরতিতে ভেটো না দিয়ে নীরব থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতেই যুদ্ধের গতি পাল্টে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকেই তাদের ভেটোক্ষমতা প্রয়োগ না করত তাহলে এত প্রাণহানি ঘটত না। যুক্তরাষ্ট্রের এ হঠাৎ মনোভাবে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এর পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে-যুক্তরাষ্ট্র কি ইসরায়েল সম্পর্কে তাদের নীতি পরিবর্তন করেছে? জো বাইডেন প্রশাসনের ভেটো না দেওয়ার এমন নীতি নজিরবিহীন। বিশ্লেষকদের মতে, এর মধ্য দিয়ে গাজা নিয়ে ইসরায়েলের নেতৃত্বের প্রতি ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান হতাশা মনোযোগ কেড়েছে।

যদিও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতীকী কিংবা বাগাড়ম্বরপূর্ণ প্রচেষ্টা থেকে বেরিয়ে এসে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের মৌলিক সমর্থনের বিষয়টি নতুন করে চিন্তাভাবনা করা দরকার। অবশ্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো না দেওয়া প্রসঙ্গে রাজনীতি-বিশ্লেষক অ্যাডাম শাপিরো বলেন, ‘এটা একটি পরিবর্তন। তবে এর ফলে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়নি। এর পরও এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’

যুক্তরাষ্ট্র কি অবস্থান বদলাচ্ছে : জাতিসংঘে গাজা সংঘর্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সোমবার যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সে ভোটে অংশ নেয়নি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর অর্থ দেশটি চেয়েছে প্রস্তাব গৃহীত হোক। তাই তারা ভোটে অংশ নেয়নি। এ ঘটনার পর নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের যে প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা ছিল, আপাতত তারা সেখানে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন।’

এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের সফর বাতিল করা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাফা ছাড়া আর কোন পথে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে।’ তাঁর দাবি, যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ে তাদের অবস্থান বদলে ফেলেছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। তারা ভোটে অংশ নেয়নি কারণ, প্রস্তাবে হামাসের যথেষ্ট বিরোধিতা করা হয়নি। তবে প্রস্তাবে পণবন্দিদের ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি চিন্তক প্রতিষ্ঠান আল-শাবাকার মার্কিন নীতিবিষয়ক ফেলো তারিক কেনি-শাওয়া বলেন, গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের নীতির আসল পরীক্ষা হলো প্রতিশ্রুতি মেনে ইসরায়েলকে অস্ত্র দেবে কি না ওয়াশিংটন।

তবে এ প্রশ্নের উত্তর গতকাল স্পষ্ট করেছেন হোয়াইট হাইসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেটো না দেওয়া কখনোই, আমি আবারও বলছি, কখনোই আমাদের নীতি পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে না।’ জন কিরবি আরও বলেন, ‘আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। আমরা জিম্মিমুক্তির চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধবিরতির পক্ষে নিজেদের সমর্থন জানিয়ে এসেছি।’

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাসের পরও গাজায় হামলা অব্যাহত : গাজায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও সেখানে ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। সোমবার রাতভর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত হয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের বেশ কিছু এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এতে অন্তত ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খান ইউনিস ও গাজা সিটিতেও ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জন নিহত এবং ৯৩ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। -বিবিসি, সিএনএন

সর্বশেষ খবর