শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাইসির মৃত্যুতে কোন পথে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি

♦ প্রভাব ফেলতে পারে দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতেও ♦ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে যে বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে, তা অব্যাহত থাকা নিয়ে সন্দেহ

এর আগে ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা কাসেম সোলায়মানিকে ২০২০ সালে ড্রোন দিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। এর মাঝে হত্যা করা হয় দেশটির প্রধান পরমাণু বিজ্ঞানীকে। এই সব প্রভাবশালীর মৃত্যু ইরানকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেনি। কারণ এত কিছুর পরও ইসরায়েলের ভূখন্ডে সরাসরি হামলা করেছে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, ড্রোন সংখ্যায় তিন শতাধিক। ফলে ইরান দিনে দিনে সাহসিকতার সীমায় পৌঁছে গেছে। ঠিক সেই সময়ে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তাদের মৃত্যুর কেমন প্রভাব পড়তে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে, তা এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভূরাজনীতির প্রভাবশালী এ দুই কর্তাব্যক্তির মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। তবে কি এ মৃত্যু থেকে সবচেয়ে লাভবান হবে ইসরায়েল? এমন প্রশ্নই এখন সবার মুখে।

প্রভাবশালী দুই কর্তাব্যক্তির (প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ

বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাইসি ও আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান সংঘাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। গেল কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল তেহরান। বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ ও সমরাস্ত্রের অন্যতম জোগানদাতা ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী। নতুন প্রেসিডেন্ট এতটা আগ্রাসী হয়ে উঠবেন কি না সেটা এখন বড় প্রশ্ন এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে। শুধু তাই নয়, কয়েক দশক ধরে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো। এমনকি এ তালিকায় রয়েছে সুন্নিপ্রধান দেশ সৌদি আরবও। আর পশ্চিমা এসব শক্তির কোনো তোয়াক্কা না করে পরমাণু কর্মসূচি আরও জোরদার করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ইব্রাহিম রাইসি। এমনকি বেশ কয়েকবার ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। বলা হচ্ছে, রাইসির মৃত্যু প্রভাব ফেলতে পারে দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতেও। রাইসির মৃত্যু শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং প্রভাব ফেলবে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপীয় ভূরাজনীতিতেও। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে যে বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছিল তেহরান এখন সেই পদক্ষেপ কতটা ধারাবাহিক থাকবে সে প্রশ্ন উঠেতে শুরু করেছে অনেক মহলে। এ ছাড়া রাইসির নেতৃত্বে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেহরান।

কোনো কোনো বিশ্লেষক বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে বাইডেন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পরোক্ষভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই আলোচনায় এখন নিশ্চিতভাবেই ছেদ পড়ল রাইসির মৃত্যুতে।

ইরানের অভ্যন্তরে অস্থিরতা : এদিকে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির নিহতের ঘটনায় ইরানের অভ্যন্তরেও অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা করছে কূটনৈতিক মহল। তারা বলছেন, প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এসব কূটনীতিকের মধ্যে একজন আমেরিকা সরকারের সাবেক স্টেট ফর হাউস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জোয়েল রুবিন। ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর তিনি বলেছেন, রাইসি এবং তার সহযোগীদের মৃত্যুর নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আগামী দিনে এ ঘটনা ইরানের রাজনীতি তো বটেই, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

রুবিন বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন রাইসিকে। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবেই নন, আক্ষরিক অর্থেই খামেনি নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাকে। যাতে তার অবর্তমানে ইরানের সবকিছু রাইসির ইশারায় পরিচালিত হয়। ফলে রাইসির মৃত্যুতে ইরানের পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করতে পারে।

সর্বশেষ খবর