বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

শুরুতেই জমজমাট লোকসভা

শুরুতেই জমজমাট লোকসভা

লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের পর সংসদের লবিতে হাত মিলাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী

► রাহুল গান্ধী বলেন, সরকারের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে। কিন্তু বিরোধীরাও ভারতের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছে

► প্রথম দিনেই হইচই এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, স্পিকার প্রথম দিনেই মতৈক্যের পরিবেশকে নষ্ট করে বিভাজনের বিষয় নিয়ে এসেছেন

 

ভারতে লোকসভা অধিবেশন সম্পর্কে একটা কথা বলা হয়, তা হলো অধিবেশন মানেই জমজমাট আয়োজন। তবে গত ১০ বছরে এটা অনেকটা অনুপস্থিত। এবার প্রধম দিন থেকেই জমজমাট অবস্থায় দেখা গেছে লোকসভার অধিবেশন। স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর বিরোধী নেতারা ওম বিড়লাকে যেভাবে সাবধানবাণী শুনিয়েছেন, তা আগের দুবার হয়নি। এমনকি  ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের না দেওয়ায় বিরোধীরা যেভাবে স্পিকার পদে প্রার্থী দিয়েছিল, সেটাও বহু বছর পর দেখা গেছে।

গতকাল ওম বিড়লা দ্বিতীয়বারের জন্য স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। ইন্ডিয়ার তরফে কংগ্রেস সাংসদ কে সুরেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। কিন্তু কণ্ঠভোটেই স্পিকার নির্বাচিত হন বিড়লা। বিরোধীরা আর বোতাম টিপে ভোটাভুটির দাবি জানায়নি। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। তারপর রীতি মেনে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের বলতে দেন নবনির্বাচিত স্পিকার ওম বিড়লা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার আপনাকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাতে আপনি কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু লোকসভার মর্যাদা রক্ষার জন্য সেই কাজ আপনি করেছেন, এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এরপরই বলতে ওঠেন বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে। কিন্তু বিরোধীরাও ভারতের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছে। আগেরবারের তুলনায় এবার বেশি করে করছে। বিরোধীদের আওয়াজ যেন লোকসভায় শোনা যায়। আমি নিশ্চিত, আপনি বিরোধীদের বলতে দেবেন। বিরোধীদের কণ্ঠস্বর চেপে দিলে তা অগণতান্ত্রিক হবে। মানুষ বিরোধীদের সংবিধান রক্ষার জন্য ভোট দিয়েছেন। আমাদের আশা, আপনি সংবিধানকে রক্ষা করবেন।’ সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব তো আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘আপনার ইশারায় লোকসভা চলে। এর উল্টোটা যেন না হয়। আর কাউকে যেন সাসপেন্ড হতে না হয়। আপনি সরকার পক্ষকে যেমন সম্মান করবেন, তেমনই বিরোধীদেরও সম্মান করবেন।’   

প্রথম দিনেই হইচই : স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, সাংসদরা যেন লোকসভার মর্যাদা রক্ষা করেন। নিজের বক্তব্যের পর স্পিকার সব সাংসদকে জরুরি অবস্থার কালো দিনের ৫০তম বার্ষিকীতে ২ মিনিট নীরবতা পালন করার কথা বলেন।

মূলত অভিনন্দন পর্ব শেষ হওয়ার পর ওম বিড়লা ১৯৭৫ সালে জারি হওয়া জরুরি অবস্থার উল্লেখ করে এক দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ করেন। তাতে কীভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করেছিলেন, দেশকে জেলখানা বানিয়ে দিয়েছিলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান পদে পদে লঙ্ঘন করেছিলেন, সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করে তাকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন ও ওই সময়কে দেশের ইতিহাসের ‘কালো অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করেন। স্পিকারের কথায় বিরোধীরা হইহই করে ওঠেন। পরে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, স্পিকার প্রথম দিনেই মতৈক্যের পরিবেশকে নষ্ট করে বিভাজনের বিষয় নিয়ে এসেছেন। যেদিন সহযোগিতা ও মতৈক্যের বার্তা দেওয়ার কথা ছিল, সেদিন তিনি দুর্ভাগ্যজনক কাজ করলেন।’

মোদি-রাহুলের হ্যান্ডশেক : এদিন লোকসভার ভিতরে সৌজন্যের ছবিও দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধীকে হাত মেলাতে দেখা যায়। স্পিকার  নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে নরেন্দ্র মোদি ও তারপর রাহুল গান্ধী তাকে অভিনন্দন জানান। তারপর রাহুল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং দুজনে হাত মেলান।

বিতর্কিত মন্তব্য : এর মধ্যেই কয়েকজন সাংসদ বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। আসাদুদ্দিন ওয়েইসি ও বিজেপি সাংসদ ছত্রপাল সিং গাঙ্গোয়ার বিতর্কিত     স্লোগান দেন। তা নিয়ে প্রবল হইচই     শুরু হয়। সবমিলিয়ে শুরু থেকেই লোকসভা জমে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর