রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিরাপদ জোনে ভয়াবহ হামলা ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া আল-মাওয়াসিতে নির্বিচার বিমান হামলা

নিরাপদ জোনে ভয়াবহ হামলা ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েলের বোমায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বজনদের আহাজারি। গতকাল মধ্য গাজার দেইর এল বালাহতে তোলা ছবি –এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া আল-মাওয়াসিতে নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকালের এ ভয়াবহ হামলায় অন্তত ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আরও ২৮৯ জন আহত হয়েছে বলে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণের খান ইউনিসের কাছের নিরাপদ অঞ্চলে ইসরায়েলে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭১ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, আল-মাওয়াসিতে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামাস বলেছে, এ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই এলাকাটিকে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের সেখানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

ইসরায়েলি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্য করে আল-মাওয়াসির এক ‘উন্মুক্ত এলাকায়’ হামলা করা হয়েছে। ওই এলাকায় কেবল হামাসের সদস্যরা ছিলেন। সেখানে কোনো বেসামরিক লোকজন ছিলেন না। খান ইউনিসে হামাসের কমান্ডার রাফা সালামাকেও এ হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা। তবে হামাসের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করার ইসরায়েলি দাবি মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে হামাস। এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এ গোষ্ঠী বলেছে, ফিলিস্তিনি নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করার ইসরায়েলি দাবি এটাই প্রথম নয়। অতীতেও তাদের এমন দাবি অসংখ্যবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল দিনভর দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে তাঁর কার্যালয় জানিয়েছে। আল-মাওয়াসির একজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হামলার স্থানটি দেখে মনে হচ্ছে সেখানে বড় ধরনের ‘ভূমিকম্প’ আঘাত হেনেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া উড়ছে এবং স্ট্রেচারে করে হতাহতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। লোকজনকে শূন্য হাতে বিশাল গর্তের ধ্বংসস্তূপে মরিয়া হয়ে উদ্ধার তৎপরতার চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। হামাসের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর এ হামলা উত্তেজনার গুরুতর বৃদ্ধি। এর মাধ্যমে ইসরায়েল যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী নয়, তা পরিষ্কার। আল-মাওয়াসির কাছে কুয়েতের স্থাপিত একটি ফিল্ড হাসপাতালের ভিডিওতে ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়। সেখানে হাসপাতালের মেঝেতে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খান ইউনিসের নাসের মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেছেন, হাসপাতালে প্রচুরসংখ্যক হতাহত মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার মতো পরিস্থিতি নেই। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মাদ দেইফ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান টার্গেট।  বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এবং একাধিক হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফেরা দেইফের অবস্থান ঘিরে ইসরায়েলি বাহিনীর মাঝে ধোঁয়াশা রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালানোর অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে মনে করা হয় তাকে। ওই দিন ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও আরও ২৫১ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে হামাস। আলজাজিরা

সর্বশেষ খবর