রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিউইয়র্কে বিশাল বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

নিউইয়র্কে বিশাল বিক্ষোভ

উবার/লিফটের আগ্রাসি তৎপরতা বন্ধের দাবিতে সোচ্চার ড্রাইভাররা

কর্মরত অবস্থায় বিনা নোটিসে অ্যাপস বন্ধের নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি উবার/লিফটের আগ্রাসি আচরণ অবিলম্বে না থামলে শিগগিরই ড্রাইভাররা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে। দাবি আদায়ের জন্যে ড্রাইভাররা ঐক্যবদ্ধ বলে সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি হলের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে এই হুমকি প্রদান করা হয়েছে। নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্স আয়োজিত এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দুই হাজারের অধিক ড্রাইভার অংশ নিয়ে উবার/লিফটের কঠোর সমালোচনামূলক স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করেছেন। উল্লেখ্য, গত জুন থেকে কর্মরত অবস্থায় অ্যাপস বন্ধ করার বেআইনি তৎপরতা শুরু করেছে উবার/লিফট। যার ভিকটিম হয়েছে এই সিটির ৮০ হাজারের অধিক পরিবার। কারণ, একবার অ্যাপস বন্ধ করার পর অনিশ্চিত অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই বসে থাকতে হয়। কখনো কখনো এক ঘন্টা, আবার কখনো কখনো ২ ঘন্টার অধিক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে আয় কমেছে অকল্পনীয়ভাবে। এহেন অবস্থার অবসান দাবিতে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে একটি বিল উত্থাপন করেছেন কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান। সেই বিলটি যাতে অবিলম্বে পাস হয় সে জন্যে নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলম্যানদের সঙ্গে লবিংয়ের আহবান জানিয়ে বক্তব্য দেন জ্যাকসন হাইটস এলাকার এই কাউন্সিলম্যান।

নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ভৈরবী দেশাই সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে ক্ষুব্ধচিত্তে বলেন, যারা কঠোর শ্রমে নিউইয়র্ক সিটিকে সচল রাখছেন সেই মানুষগুলোর সঙ্গে উবার/লিফটের এমন অমানবিক আচরণ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। টিএলসিকে আমরা অনুরোধ-উপরোধ করেছি। কোন সাড়া পাইনি। ড্রাইভাররা কর্মকালীন সময়ের পুরো আয়ে সক্ষম হন সে ব্যবস্থা অবিলম্বে করতে হবে টিএলসিকে। তা যদি না করা হয় তবে আমাদের ইউনিয়ন ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে। এ সময় তুমুল স্লোগান উঠে, ‘ড্রাইভার পাওয়ার ইজ ইউনিয়ন পাওয়ার’, ‘শ্যাম অন উবার/লিফট’, ‘নো ড্রাইভার-নো উবার’ ইত্যাদি। স্লোগানে নেতৃত্ব প্রদানকারিগণের মধ্যে বাংলাদেশী টিপু সুলতানসহ অনেকেই ছিলেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে উবার/লিফট ড্রাইভারের ২৫% হলেন বাংলাদেশি। অসহনীয় দাপদাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে তা দৃশ্যমান হয়েছে। সকলেই ছিলেন ক্ষুব্ধ।

২০১৫ সাল থেকেই উবার চালাচ্ছেন বাংলাদেশি আমেরিকান মো. লিটন। প্রচন্ড ক্ষোভের সঙ্গে এ সংবাদদাতাকে লিটন বলেন, আমাদের ন্যায্য অধিকারগুলো ওরা কেড়ে নিয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় কর্মঘন্টার অপচয় ঘটিয়ে। এরফলে আয় একেবারেই কমে গেছে। অথচ উবার/লিফট কত রকমের লোভ দেখিয়ে দামি গাড়ি ক্রয়ে প্রলুব্ধ করেছে। আমরা ঋণের মাধ্যমে গাড়ি ক্রয় করেছি। এখন কিস্তি ঠিকমত দিতে পারছি না। গুণতে হচ্ছে আসলের সঙ্গে কয়েকগুণ সুদ।

খেঁটে খাওয়া মানুষের বিশেষ করে অভিবাসী সমাজের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আপোসহীন স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান যোহরান মামদানী এ সংবাদদাতাকে বলেন, উবার/লিফট শত-সহস্র বিলিয়ন ডলার আয় করছে ড্রাইভারদের জিম্মি করে। অথচ ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না। হাজারো ড্রাইভার আজ কঠিন সংকটে নিপতিত বলে কাজ ছেড়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। যোহরান বলেন, যাদের রক্ত-ঘামের বিনিময়ে উবার/লিফট বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামাচ্ছে, সেই পরিশ্রমী ড্রাইভারের ন্যায্য অধিকার দিতে চাচ্ছে না বলেই ইচ্ছামত অ্যাপ বন্ধ করছে। ডেমক্র্যাটিক পার্টির অ্যাসেম্বলীম্যান যোহরান আরো বলেন, ড্রাইভারদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সিটি কাউন্সিলে উত্থাপিত বিলটি পাশে আমিও সরব রয়েছি। সে জন্যে এসেছি এই সমাবেশে।

বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তব্যকালে যোহরান গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যে উল্লেখ করেন, ঠিক তিন বছর আগে এই স্থানেই ট্যাক্সি   ড্রাইভারদের দাবির সমর্থনে আমরা অনশন শুরু করেছিলাম এবং তা চলেছে ১৫ দিন। সেদিন সিটি মেয়র আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছেন। তার ফলে মেডেলিয়ন-মালিক ড্রাইভারগণ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। আজ আবার এসেছি। সিটি মেয়রকে অনুরোধ জানাতে যে, উবার/লিফটের আগ্রাসী আচরণ বন্ধের জন্যে অবিলম্বে টিএলসিকে একটি বিধি তৈরি করতে হবে। যোহরান বলেন, আজ আমরা এখানে এসেছি উবার/লিফট এবং টিএলসিকে বার্তা দিতে যে, যখন তখোন অ্যাপস বন্ধ করার প্রবণতা থেকে সরে না এলে আমরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো। কারণ, উবার/লিফট নয়া এই কৌশলে ড্রাইভারগণের পকেট কাটছে। তিনি বলেন, ড্রাইভাররা হলেন কর্মজীবী এবং তারা গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি কিছু সঞ্চয়ের অধিকারও রাখেন। এখন ঘটছে তার উল্টো।

সমাবেশের পর ড্রাইভাররা ব্রডওয়ে ধরে উবার/লিফটের সদর দফতরের সামনে যান এবং ঘন্টাখানেক অবস্থান করেন। তারা ইতিমধ্যেই টিএলসি সমীপে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন অবিলম্বে অ্যাপস বন্ধ করা থেকে বিরত হবার জন্যে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর