২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ১৪:০৪

দেশে ফেরত গেল পশ্চিমবঙ্গের হোমে আটক ২ বাংলাদেশি কিশোর

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

দেশে ফেরত গেল পশ্চিমবঙ্গের হোমে আটক ২ বাংলাদেশি কিশোর

আজমীর শরীফ যাবে বলে ২০১৬ সালের আগস্টে বন্ধুদের সাথে ঘর ছেড়েছিল আট বছরের বাংলাদেশি কিশোর মুহাম্মদ রনি (বর্তমানে ১০ বছর)। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের পরই বালুরঘাট রেল স্টেশন থেকে তাকে আটক করে বিএসএফ। ব্যাস! তারপরেই তার আজমীর শরীফ দেখার স্বপ্ন-স্বপ্নই রয়ে গেল। এরপর চার বন্ধুর সাথে রনির ঠাঁই হয় ওই জেলারই ‘শুভায়ন’ হোমে। হোমেই তার হাতে খড়ি হয় প্রাথমিক শিক্ষার। চিনতে শুরু করে অ-আ-ক-খ। এখানেই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিও করা হয় রনিকে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভাল সুনাম কুড়ায়। জেলা পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের হয়ে অংশগ্রহণ করে ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম ও ২০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ভালবাসা ও প্রশংসা কুড়ায় রনি। অল্প সময়ের মধ্যেই সকলের আদরের হয়ে উঠেছিল ছোট্ট রনি। প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ভারতে কাটিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার নিজের দেশে বাবা-মা’এর কাছে ফিরে গেল রনি।
রনির মতো মুহাম্মদ দিলোয়ার হোসেনও ভারতে ঘুরতে এসে বিএসএফ’এর হাতে আটক হয়। তার স্বপ্ন ছিল ছয় ভাই ও দুই বোনের অভাবের সংসারে স্বচ্ছল অবস্থা ফেরাতে ভারতে কোন একটা কাজ জুটিয়ে নেবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই ২০১৬ সালেই অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তারও স্থান হয় ‘শুভায়ন’ হোমে। এদিন রনির সাথেই সেও ফিরে গেল বাবা-মা-পরিবারের কাছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের হিলি সীমান্ত দিয়ে এই ২ কিশোরকে বিজিবি’এর হাতে তুলে দেয় বিএসএফ। এর আগে হোম থেকে কিশোরদের এসকর্ট করে হিলি সীমান্তে নিয়ে আসা হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের অংশে হিলি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোাস্ট (আইসিপি) ওসি শিপ্রা রায়, হিলির গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ মন্ডল, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ‘চাইল্ড লাইন’এর সেন্টার কোঅর্ডিনেটর সুরজ দাস, শুভায়ন হোমের কর্মকর্তা পরেশ হাজরা, বাংলাদেশ হিলি ইমিগ্রেশনের ওসি আফতাব হোসেন এবং বিএসএফ ও বিজিবি’র কর্মকর্তারা।
রনির বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালের মুলাদি থানার পূর্ব তাইকা গ্রামে। তার বাবা মুহুম্মদ এসকেন মোল্লা পেশায় রিরশা চালক। বাড়িতে দুই ভাই ছাড়াও রয়েছে এক বোন।
অন্যদিকে ময়মনসিংয়ের ফুলবাড়ি থানার তিতারছালা গ্রামে বাড়ি মুহাম্মদ দিলোয়ার হোসেন (১৪)-এর। বাবা রফিক মিস্ত্রি পেশায় রাজমিস্ত্রি। দীর্ঘদিন পর মুক্তির স্বাদ পেয়ে প্রত্যেকেরই চোখে মুখেই ছিল আনন্দ ও উচ্ছাসের ছাপ।
চাইল্ড লাইন’এর সেন্টার কোঅর্ডিনেটর সুরজ দাস জানান ‘এদিন দুই বাংলাদেশি কিশোরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হল। ১ বছর ৮ মাস আগে এরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফ আটক করে। তারপর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)’এর নির্দেশে চাইল্ডলাইনের মাধ্যমে শুভায়ন হোমে আশ্রয় পায় এই কিশোররা’।
তবে শুধু রনি বা দিলোয়ারই নয়, শুভায়ন হোমে আটক আছে আরও ২৬ জন বাংলাদেশি কিশোর। যারাও মুক্তির জন্য দিন গুনছে।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর