শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশে গড়ে উঠেছে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। সিভিল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানের জমি দখল করে গড়ে তোলা এসব অবৈধ স্থাপনা এখন বিমানবন্দরের সৌন্দর্যহানি শুধু নয়, নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিহ্নিত দুই ডজন দখলবাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব জমি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে ২০ লাখ টাকা। ভাত, পান-সিগারেট, ফ্ল্যাঙ্েিলাড, গাড়ি পার্কিংসহ বিভিন্ন দোকান ও ছোট ছোট অফিস ভাড়া দেওয়ায় সেখানে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক চোরাচালানি ও অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দখলবাজ চক্রের সঙ্গে সিভিল এভিয়েশন, বিমান, বন্দরে দায়িত্বরত থানা পুলিশ, আনসার, সিবিএ'র কতিপয় সদস্যসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। এ কারণে এসব স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষ কখনোই ব্যবস্থা নেয় না। যোগাযোগ করা হলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিমানবন্দরের চারপাশে কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা বেআইনি। এমন ধরনের কাজ হয়ে থাকলে শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে। সরেজমিন সিভিল এভিয়েশন ও কাস্টম হাউস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এ দুই অফিসের চারদিকেই রয়েছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। কাস্টম হাউস বাউন্ডারির মধ্যেই রয়েছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকের সামনে ফেলে রাখা পুরনো কনটেইনার দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ভাতের দোকান। শত শত মানুষ এখানে টেবিল-চেয়ার নিয়ে ভাত খান। খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে পুরো এলাকায় করে রাখা হয়েছে আবর্জনার স্তূপ। স্থানীয় চা-দোকানদার কালাম জানান, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই এলাকায় প্রবেশ করা খুবই কষ্টকর। এখানে ভাত বিক্রি করছেন স্থানীয় বাসিন্দা সালাম, সখিনা ও মিন্টুর বাপসহ ১০ জন। এ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু আনসার বাহিনীর সদস্যকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা বখড়া দিয়ে এখানে দোকান চালাচ্ছেন তারা। কার্গো ও সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ভবনের সামনে দেখা যায় একই ধরনের শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। বিমানবন্দর ট্যাঙ্কি্যাব ড্রাইভারস ইউনিয়ন, শ্রমিক কল্যাণ শ্রমজীবী সমিতি, কার্গো কমপ্লেঙ্ পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়নের ব্যানারে এ এলাকায় রয়েছে আড়াই শতাধিক অফিস। বিমানবন্দরের সামনে রাস্তার পূর্বপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান ও অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। সিভিল এভিয়েশনের জমি দখল করে গোলচত্বর-সংলগ্ন বিশাল মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের প্রশাসনিক কর্মকতা রুহুল আমিন বলেন, অবৈধ এ মার্কেটটি ইচ্ছা থাকলেও উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। মার্কেটের বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মসজিদ। সিভিল এভিয়েশনের গাড়ির এক চালক এ মসজিদ মার্কেটটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ মার্কেট থেকে ওই চালক প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন। এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন সংস্থার সম্পত্তি বিভাগের টপ টু বটম কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কিছু সদস্য। সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা আবদুস সবুর বলেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে এত বড় বিশাল অবৈধ স্থাপনা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। বিমানবন্দর থানার ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনা কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় উচ্ছেদ করার পর আবারও বসছে অবৈধ দখলদার।