বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩ ০০:০০ টা
জেলহত্যা মামলার আপিল শুনানি

'বেয়নেটে খুঁচিয়ে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যু'

কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন মামলার প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক। আদালতকে তিনি জানান, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারা অন্তরীণ চার নেতাকে প্রথমে গুলি করার পরও তাদের দুজন বেঁচে ছিলেন। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গতকাল আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারি আবারও শুনানি হবে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, মামলার দুটি দিক_ অপরাধ সংগঠন ও ষড়যন্ত্র। সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তারা কারাগারে গিয়ে প্রথমে চার নেতাকে গুলি করেন। এরপর আরেকটি দল গিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আদালতে আনিসুল হক সাতজনের সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন। আনিসুল হক বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। হাইকোর্টের রায় ছিল বিকৃত। কারণ হাইকোর্ট একজন ছাড়া বাকি সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। আপিলে আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি। গত ১২ ডিসেম্বর মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান রায় ঘোষণা করে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ডের আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও আবুল হাশেম মৃধাকে অব্যাহতি দেন। মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও হাইকোর্ট খালাস দেন। তবে এ বিচার সঠিকভাবে হয়নি_ এমন অভিযোগে চার নেতার পরিবারের সদস্যরা রায় পুনর্বিচার দাবি জানান। পরে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন মঞ্জুর করেন। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্দসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সংক্ষিপ্তসার আপিল বিভাগে জমা দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর