শরীরের বেশকিছু স্থানে সাদা ব্যান্ডেজ জড়ানো। কিছু স্থানে দগদগে ক্ষতচিহ্ন। ডান চোখের পাতাসহ মুখমণ্ডলের বেশকিছু জায়গায় ওষুধ (ক্রিম) লাগানো। এ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ নম্বর বেডে অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন এসিড সন্ত্রাসের শিকার ইডেন কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তার আঁখি (২৩)। চোখ মেলে ভালোভাবে দেখতেও পারছিলেন না। কারণ ডান চোখের কর্নিয়াসহ শরীরের বেশকিছু অংশ এসিডে ঝলসে গেছে। নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন তিনি।
সরেজমিন গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে এ চিত্র লক্ষ্য করা যায়। স্বজনরা নানাভাবে আঁখিকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। চোখে এসিড পড়ায় দুপুরে আঁখিকে চক্ষু বিভাগেও নেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণের পর তার চোখের মারাত্দক কোনো ক্ষতি হয়নি বলে চিকিৎসকরা জানান। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বখাটেদের এডিস হামলার শিকার ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আঁখিকে দেখতে গতকাল হাসপাতালে ভিড় করছিলেন স্বজন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ও একাধিক মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তবে ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গতকাল দুপুর ২টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ হাসপাতালে গিয়ে আঁখির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারসহ নানা বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী আঁখিকে আশ্বস্ত করেন। আঁখির ওপর এসিড হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে ইডেন কলেজ এলাকায় মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও এসিড সার্ভাইভারস ফাউন্ডেশন। আঁখির চিকিৎসক ও ঢামেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক জানান, এসিড আঁখির ডান চোখে পড়ায় কর্নিয়া কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মারাত্দক ক্ষতি হয়নি। শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে চানখাঁরপুলে কাজী অফিসের ভেতরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন আঁখি। মনির ও মাসুম নামে দুই যুবক এ ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন আঁখি ও তার স্বজনরা। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হামলাকারী ওষুধ সরবরাহকারী ব্যবসায়ী মনির মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকতেন। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বুড়িনশ্বরে। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, আঁখি বা তার স্বজনরা পুলিশকে ঘটনা সম্পর্কে কিংবা নেপথ্যের শত্রুতার ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন না। অনেক কিছুই গোপন করার চেষ্টা করছেন। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও পরিবারের লোকজন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এদিকে এ ঘটনায় কাজি অফিসের সহকারী হাবিবুল্লাহকে পুলিশ গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় আঁখির বড় ভাই সরকারি কর্মকর্তা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে চিকিৎসাধীন আঁখি সাংবাদিকদের জানান, মনির নামে ওই যুবক তাকে বিয়ে করার জন্য জিম্মি করে চানখাঁরপুলের কাজি অফিসে নিয়ে যান। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মনির ও তার সহযোগী মাসুম ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসান জানান, ঘটনার পর থেকে মনির ও মাসুমের ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ। মনির-মাসুমসহ তাদের স্বজনদের মুঠোফোন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। কেন এসিড হামলা চালানো হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গেলেও তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পুলিশের কাছে নেই। অপরদিকে আঁখির শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না।