রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া ঠেকাতে সীমান্তবর্তী ১৩ উপজেলার ১৭ হাজার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কঙ্বাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির এ ১৩ উপজেলায় এসব আবেদন নাকচ হয়। গতকাল কমিশন সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, সীমান্তবর্তী তিন জেলার চিহ্নিত এলাকাগুলোয় কোনোভাবেই রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন, তা যাচাইয়ের জন্য বলেছি। এসব এলাকায় বিশেষ কমিটি ভোটারদের বিশেষ ফরম পুনরায় খতিয়ে দেখবে। এর আগে চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ১৩ উপজেলায় ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর নতুন করে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নির্বাচন কমিশনও অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য প্রায় ১০ হাজার আবেদন এসেছে এসব এলাকার জেলা ও উপজেলা নির্র্বাচন কমিশন অফিসে। এ জন্য খসড়া ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কমিশন। একই সঙ্গে নতুন নিবন্ধিত ভোটারদের বিষয়ে আরও তথ্যানুসন্ধানের জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আজকের কমিশন বৈঠকে রোহিঙ্গা ভোটার বাদ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর আগে খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার বাদ দিয়েছে ইসি। ইসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলা ও কঙ্বাজার, বান্দরবান, রাঙামাটির ১৩ উপজেলায় হালনাগাদ ভোটার তালিকা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও গতকালের কমিশন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ এলাকা হিসেবে পরিচিত এসব ভোটারের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে একটি বিশেষ কমিটি করা হয়েছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব এলাকায় ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা প্রকাশ করায় বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী সচিব মিছবাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, কঙ্বাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান এলাকার গোয়েন্দা বিভাগ থেকে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আশঙ্কাজনক হিসেবে চিহ্নিত মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১৩ উপজেলা হচ্ছে কঙ্বাজার সদর, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া ও মহেশখালী; বান্দরবান সদর, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ আহম্মদ খান বলেন, ভোটার যোগ্যদের সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি রোহিঙ্গা বা অনুপ্রবেশকারীরা যাতে ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গারা ভোটার হচ্ছেন, এমন অভিযোগ তদন্ত করে ২০০৯ সালে হালনাগাদের সময় অর্ধ লাখ ভোটার নিবন্ধনের আবেদন ফরম বাতিল করে ইসি। রোহিঙ্গারা ভোটার হয়ে দেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে, এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে।