বন্ধুত্বের যে বীজ বুনে গেলাম তা আগামী প্রজন্ম ভোগ করবে
রাশিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মস্কোয় যে বন্ধুত্বের বীজ তিনি বপন করে গেলেন, দুই দেশের আগামী প্রজন্ম তার ফল ভোগ করবে। গতকাল মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সহযোগিতার প্রেক্ষাপট নিয়ে দেওয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বিডিনিউজ। তিনি বলেন, আমাদের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও উদ্দেশ্যগুলো যখন এক বিন্দুতে মিলিত হবে, আমাদের বন্ধুত্বও আরও শক্ত ভিত্তি পাবে, তাতে সুফল আসবে, দুই দেশের মানুষের জীবনে আসবে সমৃদ্ধি। আমি আজ মস্কোয় এসেছি, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সঙ্গে নিয়ে সেই বন্ধুত্ব আর সহযোগিতার বীজ বুনতে, যার ফল হয়তো আগামীতে আপানারা ভোগ করবেন। প্রায় চার দশক পর বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে রাশিয়া এলেন শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশটিতে ১৯৭৪ সালে সফরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পেঁৗছালে তাকে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ভিক্তর আস্তোনোভিচ সাদোভনিচি। তিনি প্রথমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জাদুঘর পরিদর্শন করেন, পরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে আস্তোনোভিচ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং যুদ্ধ-পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তার কথাও উল্লেখ করেন আস্তোনোভিচ। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫-এর পর দুই দেশের সম্পর্ক থেমে যায়। এখন আমরা আবার নতুন করে শুরু করলাম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের অধিকারের দাবি তুললে পাকিস্তানের দখলদাররা তাদের ওপর গণহত্যা চালায়। সেই দুর্দিনের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বক্তৃতার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। রাশিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। বক্তৃতায় বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং শিক্ষা, উন্নয়ন, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সত্তরের দশকে আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছিল। আজ তা মাত্র আধা বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আমরা যা রপ্তানি করি তার চেয়ে দ্বিগুণ আমাদের কাছে রপ্তানি করে রাশিয়া। বাংলাদেশি পণ্য কিনে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এ ছাড়া রাশিয়া, কাজাখস্তান ও বেলারুশের ১৮ কোটি মানুষের সমন্বিত বাজার কাস্টমস ইউনিয়নও বাংলাদেশি পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাশিয়া ও কাস্টমস ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পরমাণু কেন্দ্রের কাজ শুরু এ বছরই : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এ বছরই শুরুর আগ্রহ দেখিয়েছেন রাশিয়ার আণবিক শক্তি করপোরেশন (রোসাটম)-এর প্রধান। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ঢাকা-মস্কোর চুক্তির পর দিন গতকাল শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই পরিকল্পনার কথা জানান রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েনকো।