সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

অগ্রিম টিকিট উধাও

ঈদ আসছে। বাড়ি যেতেই হবে। এ জন্য দরকার টিকিট। তা বাস, ট্রেন, লঞ্চ যাই হোক। টিকিটের সন্ধানে লোকজন সেহরি খেয়েই ছুটছে টার্মিনাল, স্টেশনের উদ্দেশে। কেউবা রেল স্টেশনেই সেহরি সারছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই খুব কাঙ্ক্ষিত সেই টিকিটের দেখা পাচ্ছেন না। যাত্রীদের অভিযোগ, কাউন্টারের লোকজন অনেক টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করছে। আবার কেউ টিকিট থেকেও না বলছে। তারপরও ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকে টিকিটের আশায় ঘুরছেন ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে। গাবতলীতে উধাও ঈদ অগ্রিম বাসের টিকিট : গতকাল সরেজমিন গাবতলী ও কলেজ গেট এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কাউন্টারে টিকিট নেই। কিন্তু বাড়তি দাম দিলেই মিলে যাচ্ছে টিকিট।

উত্তরবঙ্গগামী বাদল এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে ঈদ অগ্রিম টিকিট কিনতে আসা যাত্রীতে ঠাসাঠাসি। রমজান আলী নামে রাজগামী এক যাত্রী জানান, অনেক ঘোরাঘুরি করার পর ৭ আগস্টের রংপুরের টিকিট ৪০০ টাকার জায়গায় ৫০০ টাকায় কিনেছি। কল্যাণপুরের আগমনী এঙ্প্রেসের যাত্রী সোহরাব হোসেন বলেন, চার ঘণ্টা চেষ্টার পর গাইবান্ধার এসি বাসের টিকিট ৭৫০ টাকার জায়গায় ৮০০ টাকায় কিনেছেন। ট্রিপ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার টিকিট ও ট্রিপ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ মহাসড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে সব বড় বড় বাস কোম্পানি এবার ট্রিপের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ঈদের আগে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।

সদরঘাটে পান-সিগারেটের দোকানে লঞ্চের কেবিনের টিকিট : গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ। লঞ্চের কেবিনের টিকিট নিয়ে সেখানে চলছে লুকোচুরি। ফলে লঞ্চগুলোতেও সৃষ্টি হয়েছে টিকিটের কৃত্রিম সংকট। মালিক পক্ষ টিকিট আছে, দাবি করলেও কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট নেই। এমন অবস্থায় লঞ্চে বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাতায়াতকারী শত শত যাত্রীর। এদিকে যাত্রীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। গতকাল ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি ইউনাইটেড লঞ্চের ভাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১৫০০ আর ডাবলের জন্য ৩০০০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই লঞ্চের যাত্রী বাবুল শেখ অভিযোগ করে বলেন, লঞ্চের টিকিট কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে মিলন নামের এক কর্মচারীর হাতে ১২০০ টাকার জায়গায় ৩০০ টাকা বেশি অর্থাৎ ১৫০০ টাকা গুঁজে দেই। বাড়তি টাকা পেয়ে আমাকে টার্মিনালের অপর প্রান্তের খোকনের পান-সিগারেটের দোকান থেকে ৮ আগস্টের কেবিনের টিকিট হাতে তুলে দেয়। কমলাপুর স্টেশনে রাত-দিন অপেক্ষা : তিলধরনের ঠাঁই নেই কমলাপুর রেল স্টেশনে। ঈদ অগ্রিম টিকিটের জন্য ঠাসাঠাসি। সন্ধ্যা রাত থেকে অপেক্ষা করেও অনেকেই পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত টিকিট। অনেকে আবার টিকিট পেয়ে স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। গতকাল ঈদ অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিনে বিক্রি হয় ৬ আগস্টের টিকিট। আজ বিক্রি হবে ৭ আগস্টের। গতকালও ২৮টি নিয়মিত আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে এ দিন ৭ জোড়া স্পেশাল ট্রেনের টিকিটও বিক্রি করা হয়। বেলা ১১টায় রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবু তাহের স্টেশন ও টিকিট বিক্রয় কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গেলে যাত্রীরা নানা অভিযোগ জানান তার কাছে। টিকিট না পাওয়া শত শত যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের প্রশ্ন ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও তারা কেন টিকিট পাচ্ছেন না। স্টেশন চত্বরে টিকিট কালোবাজারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নীরব। গতকাল সকাল ৯টায় শুরু হয় টিকিট বিক্রি। তিন ঘণ্টা না যেতেই দুপুর ১২টায় মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ, গোধূলী ও তূর্ণা নিশীতা ও সিলেটগামী উপবন এঙ্প্রেসের টিকিট শেষ। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা টিকিট প্রত্যাশীরা চিৎকার শুরু করেন। উপবনের টিকিট নিতে আসা রহিম উদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, শনিবার রাত ১১টায় এসে লাইন দিয়েছি। লাইনে সেহরি খেয়েছি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ৮ আগস্টের টিকিট পেয়েছি।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি ট্রেনে ৫-৭টি কেবিন থাকলে তার বিপরীতে শতাধিক কেবিনের অনুরোধ ও টোকেন আসছে। মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক ও রেলওয়ের কর্মকর্তাদের নামেই বেশির ভাগ টিকিট চলে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর