সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

বাঘ বাঁচান সুন্দরবনকে বাঁচান

বাঘ বাঁচান সুন্দরবনকে বাঁচান

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩ দেশে এখনো বাঘের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এই দেশগুলোকে টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রি বা টিআরসি বলা হয়। বাংলাদেশের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিশ্ব বিখ্যাত। বাঘের অস্তিত্ব রক্ষায় বিগত ২০১১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে টিআরসি'র ১৩ দেশ যৌথ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশেও আজ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাঘ দিবস পালিত হবে। এবারের বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় বাঘ বাঁচান, মায়ের মতো সুন্দরবন রক্ষা করুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে। প্রতিবছর এই দিনে (২৯ জুলাই) বাঘ দিবস পালন করা হলেও বাঘ হত্যা কমছে না। সরকারি হিসেবে গত ১২ বছরে গণপিটুনিতে সুন্দরবনের ২১টি বাঘ মারা গেছে। বেসরকারি পরিবেশবিদদের মতে, এর সংখ্যা ৩০-এর কম নয়। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বন বিভাগ আজ সমাবেশ ও আলোচনার সভার আয়োজন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ইউনিয়ন (আইইউসিএন)-এর লাল তালিকা অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ২৫০০। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ২৫০টি। কিন্তু ২০০৪ সালে সরকার পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি।

২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত (১২ বছরে) শুধু সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ১৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি হত্যা। ৫টি গণপিটুনিতে ও ৪টি বার্ধক্যজনিত কারণে ও ২টি সিডরের আঘাতে মারা যায় বলে জানান বিভাগীয় বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষক মিহির কান্তি দে। অপরদিকে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন জানান, গত ১২ বছরে ১৪টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০টিকে পিটিয়ে ও ৬টির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাঘ রক্ষায় বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী হত্যায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছর জেলের বিধান করেছে। বন্য প্রাণীর আক্রমণে মানুষ নিহত হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লাখ টাকা এবং আহত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার বিধান করে আইন প্রণয়ন করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় নিহত ২২ জনের পরিবারকে বিগত ২০১১ সালে ২২ লাখ টাকা প্রদান করে। এ ছাড়া আহত ৮ জনকে ৫০ হাজার করে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এভাবে সর্বমোট ২৬ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আনুষ্ঠনিকভাবে প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার 'টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান' নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে বাঘের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশের বাঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে যে পরিমাণ বাঘই থাকুক দ্রুত এর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে একদিকে বন ধ্বংস হচ্ছে। অন্যদিকে ধ্বংস হওয়া এলাকায় নতুন বসতি গড়ে উঠছে। এতে বনের ওপর নিভর্রশীল মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আর এ কারণে বাঘের স্বাভাবিক চলাচলের স্থান ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। আবার ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার পর হঠাৎ করে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে। কারণ সিডর ও আইলায় নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জোয়ারের পানি বনের ভেতর প্রবেশ করে আর বের হতে পারে না। ফলে বনের মিষ্টিপানির পুকুরগুলো নোনাপানিতে ভরে যাওয়ায় বাঘ মিষ্টিপানির আশায় লোকালয়ে প্রবেশ করে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়ার চড়া মূল্য থাকায় এখন চোরা শিকারিদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে সুন্দরবনের বাঘ। ১৯৮০ থেকে বাঘের চামড়া সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর বিদেশে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে শতাধিক বাঘের চামড়া।

 

 

সর্বশেষ খবর