সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোহানার আর্তি

আমার সন্তান যেন এতিম না হয়

আমার সন্তান যেন এতিম না হয়

আমার স্বামীর খোঁজ দেওয়ার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের নয়? জাতির কাছে প্রশ্ন, আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেবে কে? ২২ দিন ধরে গুম হওয়া যুবলীগ নেতার স্ত্রীর এমন প্রশ্নের জবাব ছিল না সংবাদ সম্মেলনে আসা কোনো সংবাদকর্মীর। কোনো পাল্টা প্রশ্নও করার ছিল না কারও। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর অপহৃত যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজের স্ত্রী সোহানা আখতার ও ছয় বছরের শিশু সন্তান আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের চিত্র এটি। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোহানা ও তার সন্তান। সবার চোখেই ছিল পানি। এ সময় সোহানা চিৎকার করে বলতে থাকেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমার অবুঝ সন্তানটিকে নিয়ে মানুষ করুন। আপনি আমার সন্তানকে এতিম হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন। আর আইভী আপা, পারভেজের মতো আমাকেও আপনি গুম করে মেরে ফেলুন।

লিখিত বক্তব্যে সোহানা আখতার দাবি করে বলেন, 'আমার স্বামীর অপরাধ তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, সাবেক এমপি শামীম ওসমান যেভাবে আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসেন সেভাবেই পারভেজ শামীম ওসমানকে ভালোবেসে রাজনীতি করতেন। পারভেজকে মেয়র আইভী ও রাবি্বরা গুম করিয়েছেন তা রাস্তার ধূলিকণা পর্যন্ত জানে। কারণ আইভী-রাবি্বরা জনসভা করে বলছেন পারভেজের লাশ পাওয়া যাবে। গত ৬ জুলাই ঢাকার গুলশান থেকে আমার সামনে ডিবি পরিচয়ে যখন পারভেজকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন ফিরোজ নামে পুলিশের একজন সার্জেন্ট পুরো ঘটনা দেখছিলেন। যদি অপহরণকারীরা পুলিশ বা র্যাবের লোক হয়ে থাকেন তবে সার্জেন্ট ফিরোজ অবশ্যই তাদের চিনে থাকবেন। এই আইভী-রাবি্বরাই ২৮ এপ্রিল শহীদ মিনারে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করতে হামলা চালিয়েছিলেন। স্বামীর খোঁজ পেতে কোথাও যেতে পারছি না। কারণ যাদের সন্দেহ করছি তাদের নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার শিশু সন্তানকে অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সে স্কুলে যেতে পারছে না। অন্যদিকে গুলশান থানায় আমার মামলা নেওয়া হচ্ছে না। তারা এখন বলে বেড়াচ্ছে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যত দিন আছেন তত দিন পারভেজের খোঁজ মিলবে না। মামলাও করতে পারব না। এই আইভী-রাবি্বরা প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে নিয়ে জনসম্মুখে সমালোচনা করছেন, কটূক্তি করছেন, শামীম ওসমানের মতো নেতাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলার ঘোষণা দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমার মতো অসহায় নারীর কী-ই বা করার আছে।' সোহানা বলেন, 'এত দিন হয়ে গেল আমার স্বামী নিখোঁজ হয়েছেন, কোথায় সুশীল সমাজ? কোথায় মানবাধিকার কমিশন? যারা বড় বড় বুলি আওড়ান, টক-শো আর গোলটেবিল বৈঠক করে মানবাধিকারের কথা বলেন। তারা তো আমার ও আমার সন্তানের খোঁজ নিলেন না। পারভেজকে ফিরিয়ে আনতে দাবি জানান তিনি। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি ছাড়া আমরা কার কাছে সাহায্য চাইব? একটি সভ্য দেশে স্ত্রী-সন্তানের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। এ পাপের বোঝা কার_ সরকারের না রাষ্ট্রের। প্রধানমন্ত্রীর উচিত এই পাপের বোঝা যারা চাপাতে চাইছে তাদের চিহ্নিত করা। আমার অবুঝ শিশু সন্তানটি এখনো মনে করে তার বাবাকে আপনি এনে দেবেন। দেয়ালে টানানো আপনার বিশাল ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আমার শিশু সন্তান প্রতিদিন কাঁদে আর বলে হাসিনা দাদু, আমার আব্বুকে এনে দাও। স্বজন হারানোর ব্যথা আপনার চেয়ে বেশি কার জানা আছে। আপনি আমার সন্তানকে এতিম হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন। আমি স্বামীকে ফিরে পেতে চাই, সন্তানের পিতাকে ফেরত পেতে চাই।

সোহানা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের বলা হয় জাতির দর্পণ বা আয়না। সেই আয়নায় একজন স্বামী, একজন সন্তানের পিতাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় আপনাদের সামনে এসেছি। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যারা আমার স্বামীকে অপহরণ করে নিয়ে গেলেন তারা কারা? যদি তারা পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার লোক না হয়ে থাকেন তবে তারা কারা?

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পারভেজের মতো অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণ লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল আমিন মাকসুদের স্ত্রী মুন্নী। তিনি তার স্বামীর পরিণতির জন্য মেয়র আইভীকে অভিযুক্ত করে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আইভী-রাবি্বরা জড়িত বলে যে সন্দেহ ছিল তা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি। কারণ শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আইভীরা কেন এই মিথ্যাচার করেছেন- আমি মাকসুদের হত্যার জন্য আইভীকে দায়ী করেছিলাম এবং পরে আইভীর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমি আইভীকে অভিযুক্তই করিনি। তাহলে এমন মিথ্যাচার কেন? তাদের এ মিথ্যাচারই প্রমাণ করেছে আমার স্বামীর হত্যার নেপথ্যে তারাই দায়ী। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মর্ূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল, শহর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রশীদ, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুর রহমান, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাফায়েত আলম সানি প্রমুখ।

 

 

সর্বশেষ খবর