সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

ভাগ্য বিড়ম্বিত আমলা ড. জাকিরুল ইসলাম

ভাগ্য বিড়ম্বিত আমলা ড. জাকিরুল ইসলাম
আট বছরে পাঁচবার পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার পর নিজেকে এখন চরম ভাগ্য বিড়ম্বিতই মনে করছেন উপসচিব ড. জাকিরুল ইসলাম। সর্বশেষ চলতি মাসেও যে দুই শতাধিক উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এ থেকেও বাদ পড়েছেন ড. জাকিরুল ইসলাম। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান, ছয়টি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি, এমফিল ও পিএইচডিসহ মোট আটটি ডিগ্রি রয়েছে তার। বিএনপি সরকার আমলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন তীব্র প্রতিবাদমুখর এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। এসব কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে 'নীতিবাগিস জাকিরুল' উপাধি দিয়েছিলেন। '৯৬ থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিবের (পিএস) দায়িত্ব পালন করেন। তার জুনিয়র কর্মকর্তাদের অনেকেই সচিব হলেও প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরেই ওএসডি হয়ে দুঃসহ দিনাতিপাত করছেন তিনি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের (১৯৮৪ ব্যাচের) একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ড. জাকির। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরি শুরু করে বারবার সাহসিকতা, নৈতিকতা, নেতৃত্ব গুণ ও মেধার জন্য আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। চাকরি জীবনের শুরুতেই জেলা প্রশাসক জামিনের জন্য তদবির করলে তিনি ঢাকার জেলা প্রশাসককে (১৯৮৯) আদালত আবমাননার কারণ দর্শাও নোটিস জারি করে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (১৯৮৬) চোরাচালানিতে নিয়োজিত এক ব্যবসায়িকে ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিলে তিনি না মেনে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে কেবিনেট সচিবকে দিয়ে বদলি করিয়ে নৈতিক সাহসের পরিচয় দেন। গাজীপুরে ম্যাজিস্ট্রেট (১৯৮৯) থাকাকালে এক এমপিকে ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রতিহত করলে পার্লামেন্টে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়। আরও একবার ষড়যন্ত্রমূলক তাকে ফাঁসিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। গত বিএনপি সরকারের সময় দুদকে তার পোস্টিং হলে প্রধানমন্ত্রী অফিসের অনেক কর্মকর্তার মুখ শুকিয়ে যায়। তারা তার পোস্টিং আদেশ বাতিল করায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) থাকাকালীন মাদকচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাকে বদলি করে বিদেশে পোস্টিং করালেও তিনি গ্রহণ করেননি। পরে তিনি বিসিএস একাডেমীতে ম্যাজিস্ট্রেটদেও নৈতিকতা শিক্ষা দানের দায়িত্ব নেন। তাকে চার বার জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। তার ব্যাচকে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও শুধু তাকেই বঞ্চিত করা হয়। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে আবার তিনি বঞ্চিত হন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার জুনিয়র ১৯৮৫ ব্যাচকে পদোন্নতি দিলেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। সর্বশেষ চলতি মাসে যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে জুনিয়র ব্যাচ ১৯৮৬ থেকে দেড়শ' অফিসার পদোন্নতি পেলেও বাদ দেওয়া হয় ড. জাকিরের নামটি। পদোন্নতির জন্য বেঞ্চ মার্ক নির্ধারণ করা হয় ৮৫, অথচ ড. জাকিরের রয়েছে ৯১। দক্ষ, ন্যায়পরায়ণ, সৎ, মেধাবী থাকার পরও বিগত সময়ে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব থাকার কারণে এক-এগারো সরকার তাকে ওএসডি করে। তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ওএসডি এবং পদোন্নতি বঞ্চিত। এবারের পদোন্নতি নিয়েও অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। কেবিনেট সচিবের শ্যালিকা জেবুন্নেসা (জুনিয়র ব্যাচ) এবং তার স্বামী মামুনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ যোগ্য মেধাবী সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়নি।

সর্বশেষ খবর