শিরোনাম
শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

হুন্ডির টাকা লুটই যাদের কাজ

হুন্ডির টাকা লুটই যাদের কাজ

সংঘবদ্ধ চক্রের শতাধিক সদস্য এখন শুধু হুন্ডির টাকা ছিনতাইয়ে জড়িত। একদিকে মোটা অঙ্কের অর্থ, অন্যদিকে আইন-আদালতের ধকল পোহাতে হয় না। কারণ কোটি কোটি টাকা লুট হলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ঝামেলা এড়াতে থানা-পুলিশ করেন না। অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের এ দুর্বলতা পুঁজি করেই রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এই চক্র গড়ে উঠেছে।
জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা রাতারাতি টাকার কুমির বনে যাচ্ছেন, বাড়ি-গাড়ির মালিক হচ্ছেন। শুধু রাজধানীতেই এ ধরনের ১০টিরও বেশি চক্র আছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তারা হুন্ডি ব্যবসার বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়মিত নজরদারি করে। আর মোটা অঙ্কের টাকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার সময়ই হানা দেয়।
হুন্ডির টাকা লুটে পুলিশের সম্পৃক্ততাও বাড়ছে। রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকায় ৫ অক্টোবর হুন্ডির ৩১ লাখ টাকা লুটে নেওয়ার সময় ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই আবু কাইয়ুম গণপিটুনির শিকার হন। পরে কোতোয়ালি থানায় কাইয়ুমসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা রুজু হয়। এর আগে হুন্ডির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমানকে ক্লোজড করা হয়। একই থানার আরও দুজন এসআই ও একজন কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত হন। চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাইকালে ডিবির তিন সদস্য গ্রেফতার হন। সিলেট মহানগরীর শাহজালাল সেতুতে গত জুনের শুরুতে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে নগরীর নাইওরপুল ফোয়ারা পয়েন্ট থেকেও ছিনতাই হয় হুন্ডির ২০ লাখ টাকা।
শুধু গত নয় মাসেই হুন্ডির টাকা ছিনতাই বা আত্মসাতের ১৬টি ঘটনায় অন্তত ২৭ জন পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ ছাড়া সংঘবদ্ধ ওই চক্রের সদস্যের হাতে আরও অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় প্রায় ৬২ কোটি টাকা লুটের তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে হুন্ডির টাকা লুটের ভয়াবহ কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। রাজধানীতে পুলিশ সদস্য, তাদের সহযোগী সোর্স ও পেশাদার অপরাধীর সমন্বয়ে কয়েকটি চক্র অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হুন্ডির টাকা ছিনতাই ঘটনায় আসামি এসআই আবু কাইয়ুম ও এসআই মাহমুদুল হাসানের সমন্বয়ে এ ধরনের একটি টিম থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই টিমে সবুজবাগ থানার মিন্টু ছাড়াও চার পুলিশ সদস্য এবং সোর্স পরিচয়ধারী পাঁচজন পেশাদার অপরাধী সম্পৃক্ত। তারা গত জুনে রামপুরা ব্রিজ এলাকা থেকে হুন্ডির ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে এ টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধে সোর্স নাসির, শহিদ ও লিটন বিষয়টি গুলশান বিভাগীয় পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ফাঁস করে দেন। এ ব্যাপারে গোপনে তদন্ত চললেও দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রাজধানীতে মূলত আট-দশটি পয়েন্টে হুন্ডির টাকা লেনদেন ও লুটপাট হয়ে থাকে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানার তাঁতীবাজার স্বর্ণপট্টি, বংশালের নবাবপুর রোড, মতিঝিল ব্যাংকপাড়া, সবুজবাগ থানাসংলগ্ন ওহাব কলোনি, বনশ্রী, বনানী ও বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকা অন্যতম। এসআই আবু কাইয়ুম বনানী ও বিমানবন্দর হুন্ডি ব্যবসা পয়েন্টের মাঝামাঝি জোয়ারসাহারা ওয়ালটন পুলিশ বক্সে অবস্থান করতেন। তার ব্যবহারের স্টারলেট গাড়িটি বরাবরই হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধাওয়া করার কাজে ব্যস্ত থাকত বলে জিজ্ঞাসাবাদে সোর্সরা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর