বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

যশোরে আওয়ামী লীগ পাবনায় যুবলীগ নেতা খুন

যশোরে আওয়ামী লীগ পাবনায় যুবলীগ নেতা খুন

গতকাল যশোরে আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে ও পাবনায় যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান, যশোর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর পুরাতন টায়ার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম (৪৫) সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন। মাত্র এক মাস আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই মিছিল করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলাও করেছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ। এক মাস পর এবার আর ভুল করেনি সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শহরের তালতলা এলাকায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'আকাশ টায়ার হাউজে' বসে থাকা অবস্থায় একদল সন্ত্রাসী নজরুল ইসলামকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলি করে। পরে কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় নজরুল ইসলামকে উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ডাক্তাররা তার শরীরে একটানা ৬ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় গতকাল ভোর ৪টার দিকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নজরুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সেলিম পলাশ, মেহেদি হাসান শান্ত, হৃদয়, সুমন, সাজ্জাদ ও রনি নামে ৬ জনকে আটক করেছে। রনির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১টি শুটার গান ও ১ রাউন্ড গুলি। এ ছাড়া স্থানীয় সন্ত্রাসী নান্নুর বাড়ি থেকে তিনটি বোমা, দেড় কেজি জালের কাটি ও গান পাউডার উদ্ধার করেছে পুলিশ। যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, যশোর শহরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী 'ফিঙে লিটনের' (বর্তমানে ভারতে পলাতক) বাহিনীই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আটক করা সম্ভব হবে। এটি কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরেই হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে।  এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, পুরাতন টায়ার ব্যবসায়ী সমিতি ও স্থানীয় বাসিন্দারা পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এক ঘণ্টার জন্য ঢাকা রোড এলাকায় অবরোধও সৃষ্টি করেন। এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার পর নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতে পলাতক ফিঙে লিটনের ক্যাডাররা হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ওপর হামলা চালিয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার আদালতপাড়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত যুবলীগ কর্মী গেদাবাবু ওরফে গেদু (৩৮) শহরের দক্ষিণ রামচন্দপুর মণ্ডলপাড়ার মরহুম আবেদ আলী সরকারের ছেলে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় গুরুতর আহত নয়ন (৩০) নামে অপর এক যুবলীগ কর্মীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অস্ত্রসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী হানিফুল ইসলাম জানান, নিহত গেদাবাবু একই দলের ইমন হত্যা মামলার আসামি ছিল। গতকাল সকালে মামলায় হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বের হয়ে যুবলীগ কর্মী বাবু ও নয়ন আদালতপাড়ার সাহারা ক্লাবের সামনে পেঁৗছালে প্রতিপক্ষের একদল সন্ত্রাসী তাদের ধাওয়া করে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই একপর্যায়ে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে গেদাবাবু মারা যায়। অপর যুবলীগ কর্মী নয়নকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অস্ত্রসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো সুমন (২৭), সাগর (২৮), বিপুল (২৮), রুবেল (২৬), রনি (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাইনিজ কুড়ালসহ বেশকিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট যুবলীগের শোক দিবসের র্যালিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে শহরের সোনাপট্টিতে যুবলীগ কর্মী ইমন প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়। ইমন হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাজিরা দিতে এসে আবারও খুনের ঘটনা ঘটল।

 

 

সর্বশেষ খবর