শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

এলোমেলো শিক্ষা কার্যক্রম

বার্ষিক ও ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চিত

এলোমেলো শিক্ষা কার্যক্রম

রাজনৈতিক অস্থিরতা আর চলমান সহিংসতার কারণে সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। এলোমেলো হয়ে গেছে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। রাজধানীসহ দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা শেষ করতে পারলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পারছে না। ফলে ডিসেম্বর মাসের কোন সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আগামী মাসের প্রথম দিন সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা নতুন বই। সেই সঙ্গে পালনের কথা দেশব্যাপী বই উৎসব। কিন্তু বই উৎসবের আয়োজন নিয়ে কোনো তৎপরতা শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন উপজেলাসমূহে বই সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে ৭৩ শতাংশ বই পাঠানো হয়েছে বলেও তারা ধারণা করছেন। 
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিতরণ এবং প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির লটারির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে গতকাল মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে রাজধানীর ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভর্তি নীতিমালা মেনে চলতে প্রধান শিক্ষকদের প্রতি নির্দেশ দেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন। মতবিনিময় সভায় বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা বৃদ্ধি বন্ধ রাখতে এবং সব শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে নির্দেশ দেন। তা ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে বলেন। মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে আসা প্রধান শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান ক্যমব্রিয়ান, মাইলস্টোন, ট্রাস্ট কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের কারণে সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্যামব্রিয়ান স্কুল, মাইলস্টোনসহ হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার নামে বাণিজ্য করে। আমরা ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখার চেষ্টায় থাকি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যক্ষ জানান, তিনি চলতি বছরে তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতনের ৬৪ লাখ টাকা মওকুফ করেছেন। বাসাবো কদমতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কে নওয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না। তবে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির কার্যক্রম কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। অধ্যক্ষরা আরও জানান, আগামী ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর অবরোধ আর হরতালের মতো কর্মসূচি না থাকার সম্ভাবনা বেশি। সেই সময়টাতে সব পরীক্ষা শেষ করা যাবে। মিরপুর বাঙলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদর উদ্দিন হাওলাদার জানান, 'অবরোধের কারণে সব শ্রেণীর দুটি করে পরীক্ষা এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি।' এদিকে দেশের সবচেয়ে বড় দুটি পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে অন্য শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়েও। এতে শিক্ষকদেরও মানসিক চাপে থাকতে হচ্ছে। রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম জানান, 'আমার স্কুলে গত শুক্রবার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সব শ্রেণীর একটি করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি পরীক্ষাগুলো কীভাবে নেওয়া হবে, আদৌ নেওয়া সম্ভব হবে কি-না জানি না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর বাঙলা উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে পারছে না।

সর্বশেষ খবর