শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

দুলুর কারাবাসের এক বছর

দুলুর কারাবাসের এক বছর

বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নাটোর জেলা সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিনা বিচারে কারাবাসের গতকাল এক বছর অতিক্রম করেছে। গত বছর ৮ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর থেকে নাটোর, দিনাজপুর, ঢাকা ও রাজশাহী কারাগারে অবস্থানের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় তিনি ঢাকা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকেন। এখনো মামলার তদন্তকাজ চলছে, শুরু হয়নি বিচারিক কাজ। উচ্চ আদালত জামিন দিলেও আপিল বিভাগ স্থগিত করায় আজও তিনি মুক্তি পাননি। ফলে দল ও পরিবারে বিরাজ করছে চরম হতাশা। স্থানীয় বিএনপি ও দুলুর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাস ও ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেলে করে আসা সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন ও শহর যুবলীগ নেতা পলাশ গুলিবিদ্ধ হন। এর কয়েক মিনিট পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কথা বলে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুজ্জামান ফারুকী ও সহকারী পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে পুলিশ দুলুর বাসার চারপাশে অবস্থান নিয়ে রাত ১টার দিকে দুলুসহ চার বিএনপি কর্মীকে আটক করে। দুই দিন পর পলাশ হাসপাতালে মারা গেলে দুলুকে হত্যা মামলায় আটক দেখানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন জেলায় হরতাল পালন করে বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক অভিযোগ করেন, তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে তার ছেলে সোহেল সরকার ও বকুল সরকার এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রমজানের নেতৃত্বে দুলুর বাসায় হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। দুলুকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হাসপাতালে পলাশকে হত্যা করে দুলুকে আসামি বানিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অথচ সেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন এবং দলীয় মনোনয়নও পাননি। দুলুকে আটকের পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন তার মুক্তির দাবিতে মিছিল সমাবেশ অনশন বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বলেন, দুলুকে জামিন না দিয়ে বিনাবিচারে মিথ্যা মামলায় পুরো বছর কারাগারে আটকে রাখা হলো অথচ বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নুর বাবুকে দিবালোকে পিটিয়ে হত্যার পরও হত্যাকারীদের জামিন দিয়ে সরকার মেয়র এবং ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়ে পুরস্কৃত করেছে। দুলুর মতো জনপ্রিয় নেতা মিথ্যা মামলায় আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ার পরও মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। উচ্চ আদালত জামিন দিলেও সরকার অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে তা বাতিল করেছে। জামিন বাতিলের খবরে হার্ট অ্যাটাকে তার মা মারা গেছে। পলাশ হত্যা মামলায় দুলুকে আটক রাখা হয়েছে। অথচ পলাশের পরিবার বাদী না হয়ে বাদী হয়েছেন তদানিন্তন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ মোর্তুজা আলী বাবলু। এই বাবলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও লুটতরাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তার বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তির দাবি জানান তিনি। এদিকে, দুলুর মুক্তির দাবিতে গত সপ্তাহে জেলায় ডাকা হরতালে যুবলীগের হামলায় ছাত্রদল নেতা সাইফুজ্জামান সুজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে দুলুর ভাতিজা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই তালুকদার ডালিমসহ চারজন। এ ঘটনায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে নিহত সুজনের বড় ভাই। দুলুকে বিনা বিচারে এক বছর আটক রাখা সম্পর্কে পুলিশ সুপার ডক্টর নাহিদ হোসেন বলেছেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় আছে।

 

 

সর্বশেষ খবর