বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

দখলে দূষণে নিঃস্ব বালু-বুড়িগঙ্গা

উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত

দখলে দূষণে নিঃস্ব বালু-বুড়িগঙ্গা

অবৈধ দখল আর অব্যাহত দূষণে নিঃস্ব হতে চলেছে রাজধানীর উপকণ্ঠে বুড়িগঙ্গা ও বালু নদী। নদী দুটির দুই তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্থায়ী-অস্থায়ী ছোট-বড় স্থাপনা। আশপাশের কল-কারখানা থেকে এসে পড়ছে বর্জ্য পদার্থ। দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নদী রক্ষায় শীঘ্রই বুড়িগঙ্গা ও বালুর দুই তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া নদীর পানি দূষণ ও অবৈধ দখলদার মুক্ত করার জন্যও অভিযান শুরু করার কথা রয়েছে।

বিপন্ন বুড়িগঙ্গা : ঢাকা ও চারপাশের প্রায় ২ কোটি মানুষের মলমূত্রসহ বিভিন্ন কল-কারখানা ও গৃহস্থালির ১০ হাজার ঘন মিটারের বেশি বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গায় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী শহরের গৃহস্থালি ও বিভিন্ন কল-কারখানার উৎপাদিত ৭ হাজার টনের বেশি বর্জ্যে ৬৩ শতাংশ অপরিশোধিত কঠিন বর্জ্য বিভিন্ন খাল দিয়ে প্রতিদিন এ নদীতে পড়ছে। নদী রক্ষায় গঠিত সরকারের টাস্কফোর্স শুধু টেবিলে আছে, মাঠে নেই। টাস্কফোর্সের কোনো সিদ্ধান্তই নদী উদ্ধারে কাজে আসছে না। টাস্কফোর্সের সভায় জেলা প্রশাসন ব্যস্ত থাকে সীমানা পিলার কীভাবে হবে, তা নিয়ে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্দীয়স্বজন বুড়িগঙ্গা দখলের সঙ্গে জড়িত। বর্তমান সরকার নদী রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়েছে। সরকারকে নির্মোহভাবে নদী রক্ষায় নামতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা বিভাগের সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়_ রায়েরবাজার থেকে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন স্পটের পানি পরীক্ষায় দেখা যায়, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, চাঁদনীঘাট, সদরঘাট, ফরাশগঞ্জ, ধোলাইখাল ও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুসংলগ্ন এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর প্রতি লিটার পানিতে যথাক্রমে ৩৬.২, ১৮.৬, ২২, ২৪, ২৬.২, ২৮.৪ ও ১২.৮ মিলিগ্রাম বায়োলজিক্যাল অঙ্েিজন ডিমান্ড (বিওডি) রয়েছে। পরীক্ষা অনুযায়ী নদীর পানিতে প্রায় ১০ গুণ বেশি বিওডি থাকায় জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের জন্য মারাত্দক ঝুঁকিপূর্ণ। এ পানি আদৌ সেবন ও ব্যবহার যোগ্য নয়। নদীর পানিতে প্রতি লিটার ৪ মিলিগ্রামের বেশি অঙ্েিজন থাকার কথা। কিন্তু তা বাস্তবে নেই। এ ছাড়া নদীতে মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্দক ক্ষতিকারক সিসার পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। রাজধানী এবং এর আশপাশের বিদ্যমান প্রায় ১০ হাজার গার্মেন্ট, ডায়িং, ওয়াশিং প্লান্ট, প্লাস্টিক, পলিথিন ও ট্যানারির অধিকাংশেরই তরল বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। এসব কারখানার নির্গত বিষাক্ত কেমিক্যাল-মিশ্রিত তরল বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গাকে ঘন কালো ও বিষাক্ত করে তুলেছে। নদীর ঢাকা অংশের দুটি বড় খালসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত অর্ধশতাধিক পাইপ দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক তরল পদার্থ পড়ছে। কেরানীগঞ্জের ২৫-৩০টি খাল দিয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যমিশ্রিত পানি বুড়িগঙ্গায় নামছে। এ ছাড়াও কামরাঙ্গীরচরের ৮ সহস াধিক মানুষের মলমূত্র প্রতিদিন সরাসরি অর্ধশতাধিক স্থান দিয়ে নদীতে পড়ছে।

মরতে বসেছে বালু : রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ ও রূপগঞ্জের কোলঘেঁষে প্রবহমান প্রাণভোমরা বালু নদী এখন দূষণ-দখলে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নয়নজুড়ানো রূপ তার ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল দুই যুগ আগেই। এখন মাছ নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রব। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বেড়েছে রোগবালাই। পচা পানির কটু গন্ধে তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে।

বিপন্ন হয়ে গেছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। দূষণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নদী দখলের প্রতিযোগিতাও চলছে। নদী যাতে থাকতে না পারে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুই তীরে বালু ফেলে ভরাট করতে করতে সংকুচিত করছে বালু নদীর প্রস্থ। রাজধানী ঢাকার পয়োবর্জ্য ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়ে এ নদীর পানি এখন আলকাতরার মতো কালো হয়ে গেছে। গত দুই যুগেও বালু নদীতে উচ্ছেদ কার্যক্রম হয়নি। নদীর সংযোগ খালগুলো ধীরে ধীরে ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথও পরিবর্তন হতে চলেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, বালু নদী অবৈধ দখলের তালিকায় রয়েছে দেড় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর