শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগ - বিএনপির রাজনীতি

নভেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করার টার্গেট

নভেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করার টার্গেট

আগামী নভেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই মোতাবেক কাজ শুরু করেছে তারা। জেলা-উপজেলা সম্মেলনের পাশাপাশি দলের নিষ্ক্রিয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের কমিটির ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা।

সারা দেশে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার রাতে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। নির্দেশনা মোতাবেক সাধারণ সম্পাদক আগামীকাল রবিবার দলের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।

ওই বৈঠক থেকে জেলা সম্মেলন, সাংগঠনিক সফর, সদস্য সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন করা, দলীয় কোন্দল নিরসনে বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হবে। জেলা-উপজেলা সম্মেলন দ্রুত শেষ ও সদস্য সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবার তৃণমূলে চিঠি পাঠাবেন বলে দলীয় সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৪টিতে কাউন্সিল হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক ও যুগ্ম-আহ্বায়কের কাছে লেখা এক চিঠিতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শাখার সম্মেলন শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেন। সৈয়দ আশরাফের চিঠিতে সাড়া দেননি তৃণমূলের নেতারা। বাধ্য হয়ে সৈয়দ আশরাফ ২০১২ সালের ১০ জুন দলীয় সব সংসদ সদস্যকে আরেক দফা চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তাগিদ দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বুধবার রাতে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভানেত্রী জেলা সম্মেলন, সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর জোর দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী রবি বা সোমবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিনই কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সারা দেশে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে এবং অল্প কিছু বাদে থানা পর্যায়েও সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই জেলা সম্মেলন শেষ করা হবে। দলের সিনিয়র নেতাদের প্রধান এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদকদের সমন্বয়ক করে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে। ওইসব কমিটি সারা দেশে সফর ও জেলা সম্মেলনের নেতৃত্ব দেবে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা সম্মেলনের তারিখ ঠিক করবেন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এ সাংগঠনিক সফর শুরু করা হবে বলে আভাস দিয়েছেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা জানিয়েছেন, জুন মাসেই সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে রমজান মাসে জেলা সফর করা হলেও জেলা সম্মেলন করা হবে না। দলীয় সূত্রমতে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা সন্তোষজনক নয় বলে গত বুধবারের বৈঠকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে তার দেশে ফেরা, দলকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, যখন দেশে আসি, তখন দলের জন্য চরম ক্রান্তিকাল চলছিল। দলের মধ্যে বিভক্তিও ছিল। সারা দেশে সফর করতে গিয়ে হামলার শিকারও হয়েছি। তারপরও দলকে সংগঠিত করেছিলাম। এখন সরকারে থাকার পরও কেন সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। আগে বঙ্গবন্ধুও দলের কাজ করতে গিয়ে জেলায় জেলায় থাকতেন। আর এখন নেতারা বক্তৃতাবাজি করে খেয়েই দৌড় দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ব্যর্থতা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এখনই সংগঠনকে চাঙ্গা করতে দলের সাধারণ সম্পাদককে সাংগঠনিক টিম গঠন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, দলকে ঢেলে সাজাতে হবে। যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করে সারা দেশে সফর ও মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করুন। এ সময় সৈয়দ আশরাফ দলীয় সভানেত্রীকে জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বৈঠক করে আপনাকে অবহিত করছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংগঠনের নেতারা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছেন না। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী সমিতির ভূমিকা নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আওয়ামী নাম ধারণ করে বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠনেরও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর