শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগ - বিএনপির রাজনীতি

থমকে গেছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, তৃণমূলে হতাশা

থমকে গেছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, তৃণমূলে হতাশা

থমকে গেছে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। গত এপ্রিলে শুরু হওয়া জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে কয়েকদফা ঘোষণা দিয়েও ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির প্রায় সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের কোনো লক্ষণ নেই। যদিও সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গেল কয়েক মাস ধরেই বলা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠন করা হবে। এদিকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার স্থবিরতায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। দল না গুছিয়ে আন্দোলনে যাওয়া হলে এর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মাঠের নেতা-কর্মীদের। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান। ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোও খুব শীঘ্রই পুনর্গঠন করা হবে। সময়মতো দলকে গুছিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়া হবে। বিএনপি জোট ছাড়াও দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। গত ১০ এপ্রিল থেকে পুরো এক মাসে তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, নওগাঁ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ উত্তর, চট্টগ্রাম উত্তর, শেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওইসব জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে কয়েক সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। জানা গেছে, তৃণমূল থেকে আসা নেতারা এভাবে কমিটি ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়াকে 'অস্বচ্ছ' বলে অভিযোগ তোলে। আন্দোলনে 'ব্যর্থ' ঢাকা মহানগরকে বাদ দিয়ে আগে জেলা কমিটি ভাঙা-গড়ায় তারা মনে করেন, দল উল্টো পথে হাঁটছে। জেলা কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশেই আপাতত জেলা কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এদিকে সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নবগঠিত কমিটি নিয়েও বিতর্ক ওঠে। নতুন কমিটি নির্বাচনের লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী কাউন্সিল হলেও সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভোট ছাড়াই 'পকেট কমিটি' গঠনের অভিযোগ আসে। এ নিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, চেয়ারপারসনের নির্দেশে দলকে শক্তিশালী করে আন্দোলনে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যেই জেলা পর্যায়ে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামনে ধাপে ধাপে প্রায় সব জেলাই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলবে। একইভাবে ঢাকা মহানগর ও অঙ্গ সংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। দল গুছিয়েই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

অচল ঢাকা মহানগর সচলে জটিলতা : দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকা মহানগর বিএনপির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে গত ২৯ ডিসেম্বরের 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচিতে ঢাকার নেতারা আত্দগোপনে চলে যাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ হন বেগম জিয়া। ঢাকার অন্য সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠনও ব্যর্থ বলে মনে করেন তিনি। প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, থানা ও ওয়ার্ডে কমিটি না থাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয় বলে নেতা-কর্মীরা মনে করেন। এসব কারণেই খুব শীঘ্রই মহানগর বিএনপির কমিটি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করেন বেগম জিয়া। ইতোমধ্যেই এক সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে কমিটি হচ্ছে হবে বলে প্রায় দেড় মাস চলে গেছে।

ছাত্রদল : আন্দোলনের মাঠে না থাকায় ছাত্রদলের ওপর চরম ক্ষুব্ধ বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের অবস্থান না থাকায় চরম হতাশ দলটি। সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব কারামুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন কমিটি দেওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে গুলশান কার্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি গ্রুপকে দিয়ে প্রাথমিক তালিকাও তৈরি করানো হয়েছে। তবে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আটকে গেছে।

যুবদল : বিএনপির আন্দোলনে মূল ভরসা যুবদলও রাজপথে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি ও সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি করা হয়েছিল ২০১০ সালের ১ মার্চ। এর পর ঢাকা মহানগর যুবদলসহ কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠন করা হয়। দেড় বছর মেয়াদোত্তীর্ণ যুবদলের কমিটিও হবে খুব শীঘ্রই। শীর্ষ নেতৃত্বে টানাপড়েন সম্পর্ক, বিভিন্ন কমিটি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনে অন্যান্য সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জেলে গেলেও যুবদলের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা কারাগারে না যাওয়া নিয়েও মাঠের কর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এসব কিছু বিবেচনায় সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান কমিটির নেতাদের নিয়ে নতুনভাবে পুনর্গঠনের কথা চিন্তা করছেন বেগম জিয়া। এ প্রসঙ্গে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে জানিয়েছেন_ যুবদল পুনর্গঠন করা হবে। তাকে অন্য স্থানে জায়গা করে দেওয়া হবে। দলের প্রধান চাইলে যেকোনো সময় কমিটি করতে পারেন বলেও জানান আলাল।

স্বেচ্ছাসেবক দল : বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকায় কিছুটা খুশি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে এই সংগঠনের কমিটিও দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। তা ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারায় মাঠের নেতা-কর্মীরাও বেশ ক্ষুব্ধ। সংগঠনের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল জেল থেকে বেরুলেই কমিটি পুনর্গঠনের কথা ছিল। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের কথা বলেছেন। এখনো আমাদের নিয়ে কিছু বলেননি। ম্যাডাম চাইলে যেকোনো সময় কমিটি পুনর্গঠন করলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনেও একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

 

সর্বশেষ খবর