শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
উপজেলা নির্বাচন

অভিযোগের ছড়াছড়ি শেষ ধাপ নিয়েও

১৯ মে ভোটগ্রহণ আজ থেকে মাঠে সেনাবাহিনী

অভিযোগের ছড়াছড়ি শেষ ধাপ নিয়েও

বিগত পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা, ভোট জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটায় শেষ ধাপের নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। শেষ ধাপের নির্বাচন নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই প্রার্থীদের। শেষ ধাপের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে মাঠপ্রশাসন কাজ করছে বলেও ইসির কাছে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৯ মে ১২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে গত ১৬ এপ্রিল ষষ্ঠ তথা শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ ধাপে ১০ জেলার ১৪ উপজেলায় আগামী ১৯ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল।

পরে আইনি জটিলতায় দুটির নির্বাচন স্থাগিত করে কমিশন। এর মধ্যে আবারও রাঙ্গাবালি উপজেলার পুনঃ তফসিল দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি উপজেলার মেয়াদ শেষ না হওয়ায় ও আইনি জটিলতায় এ বছর আর নির্বাচন করতে হচ্ছে না। ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিনই নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিষয়ে নানা অভিযোগ আসছে। অনেক এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রশাসনও কাজ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনেকেই স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলির আবেদনও করেছেন। কিন্তু আগের মতোই এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কমিশন। এদিকে শেষ ধাপের নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হচ্ছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে নানা বাধা ও হামলার শিকার হচ্ছেন তারা। অনেক প্রার্থীকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই শেষ ধাপের নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে সরকার দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ইসির কাছে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তারা।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল আজিজ সরকার। অভিযোগে তিনি বলেছেন- আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মতিন চৌধুরী ঋণখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও রিটার্নিং অফিসার তার প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় প্রশাসন আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। এ জন্য কমিশন থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও ঋণখেলাপির বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এদিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাওছারুল ইসলাম সুমন (মোটরসাইকেল) নির্বাচন কমিশনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীর হুমকি-ধমকি ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন আগের রাতেই কেন্দ্র দখল করে নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ভোটের দিন আটটি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ইসিকে অনুরোধ করেছেন তিনি। এ ছাড়া এসব কেন্দ্রে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়েছে, এ উপজেলার স্পর্শকাতর আটটি ইউনিয়ন হচ্ছে পেরুল উত্তর ও দক্ষিণ, বাঘমারা উত্তর ও দক্ষিণ, ভুলুন উত্তর ও দক্ষিণ, ভেলঘর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন। অন্যদিকে একইভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিদ সিরাজী। কমিশনে দেওয়া অভিযোগে তিনি বলেন, সরকার দল সমর্থিত প্রার্থী নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। নিয়ম ভেঙে প্রতিদিন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় এমপি। এ ছাড়া স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। এ অবস্থায় বিজয়নগর থানার ওসি আবদুল রসুল নিজামীসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলির আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনেরও দাবি করেন এ প্রার্থী। এ রকম আরও অসংখ্য অভিযোগ এসেছে ইসিতে। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এবার সেনাবাহিনী উপজেলা সদরে অবস্থান করবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৬৫ কেন্দ্র, দ্বিতীয় ধাপে ১০০ কেন্দ্র, তৃতীয় ধাপে ২০০ কেন্দ্র, চতুর্থ ধাপে চার শতাধিক ও পঞ্চম ধাপেও প্রায় পাঁচ শতাধিক কেন্দ্রে দখল ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তারাও শেষ ধাপে ব্যালটে সিল মেরেছেন বলে ইসিতে অভিযোগ এসেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন। আর এসব দুর্নাম ঘোচাতে ইসি বাকি উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে।

১৯ জুন রাঙ্গাবালি উপজেলা নির্বাচন : আগামী ১৯ জুন পটুয়াখালী রাঙ্গাবালি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ ধাপের নির্বাচনের সঙ্গে ১৯ মে এ উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। বর্তমানে আইনি জটিলতা না থাকায় আবারও নির্বাচনের পুনঃ তফসিল দিয়েছে ইসি। ইসির উপ-সচিব মিহির মোর্শেদ সরওয়ার স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে ১৪ মে এ উপজেলার পুনঃ তফসিল দেওয়া হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৭ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ জুন পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে।

উৎসবমুখর করতে প্রস্তুতি ইসির মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী : ১৯ মে শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচন উৎসবমুখর করে তুলতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে বিগত পাঁচ ধাপের সংঘাত-সহিংসতায় শেষ ধাপের ভোট নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থীরা। এদিকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আজ থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। সঙ্গে থাকছে পর্যাপ্ত র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য। শেষ ধাপের এ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষক হিসেবেও থাকবেন। আজ মধ্যরাতেই শেষ হচ্ছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। একই সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে সব ধরনের যান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধ থাকবে। আজ মধ্যরাতেই বন্ধ হচ্ছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা।

 

সর্বশেষ খবর