বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

দুটি বাঘ দেওয়া হবে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে

দুটি বাঘ দেওয়া হবে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে

আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ঐতিহাসিক সফরে আসছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। সেই সফর নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে তুমুল প্রস্তুতি। অবশ্য প্রস্তুতি ঢাকা চিড়িয়াখানা ও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও আছে। কারণ রাষ্ট্রীয় এই অতিথিকে উপহার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেই বাঘের একটি দেওয়া হবে চিড়িয়াখানা ও আরেকটি সাফারি পার্ক থেকে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মে মাসে জাপান সফরে গিয়ে বাঘ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবার জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি সফরে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্য বন ও পরিবেশ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। ঠিক করা হয়েছে একটি পুরুষ ও একটি নারী বাঘ। এই দুটি বাঘকে জাপানের জাতীয় চিড়িয়াখানায় রাখা হবে। সেখানে যেন বাঘ দুটি নিঃসঙ্গ না থাকে বা পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাগত জানাতে পারে সেজন্যই দুই লিঙ্গের দুই বাঘ দেওয়া হচ্ছে। বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে বন্ধু রাষ্ট্র জাপানের জনগণকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্ক জানাতেই এই বাঘ দুটি উপহার দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষার স্বার্থে জুলাই মাসের মাঝামাঝি জাপানকে বাঘ উপহার বিষয়ক ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা যাচাই-বাছাই শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে দুটি সুস্থ ও সবল বাঘকে। সিদ্ধান্ত হয় চিড়িয়াখানার ৯ বাঘ থেকে একটি ও গাজীপুরের সাফারি পার্কে থাকা ১০ বাঘের একটি দেওয়ার। জানা গেছে, ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে যে বাঘটি দেওয়া হচ্ছে তার নাম ‘রণবীর’। ‘রাজা’ ও ‘প্রমীলা’ দম্পতির ছেলে সন্তান রণবীরের জন্ম ২০১০ সালে ৪ মে ঢাকা চিড়িয়াখানাতেই। কূটনৈতিক সূত্রের তথ্যানুসারে, গত ১৪ বছরের মধ্যে প্রথম জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এই ঢাকা সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশের বিষয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহ। এই আগ্রহের কথা প্রথম জানা যায় গত বছর জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনের সময়। সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বাংলাদেশি উন্নয়ন কর্মী নিলুফারের কথা তুলে আনেন। নিলুফার জাপানি উন্নয়ন ধারণার আলোকে বাংলাদেশে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। সেই শিনজো আবেও বাংলাদেশের কাছ থেকে আন্তরিকতার উপহার হিসেবে পাচ্ছেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যখন বিশ্বের সব প্রভাবশালী দেশই শুধু কাজের সম্পর্ক রক্ষা করেছিল তখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্বিপক্ষীয় সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এর আগে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য অংশীদাররা যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরে গিয়েছিল তখন জাপানের উন্নয়ন সংস্থাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের পাশে ছিল। আবার বিশ্বের নানান দেশে জাপানের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করা সংস্থা জেট্রোর ঢাকা কার্যালয়ই বিশ্বের অন্য সব রাজধানীর কার্যালয় অপেক্ষা সর্বাধিক ব্যস্ত। সব হিসাবই দুই সরকার প্রধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখছে। হয়তো সেকারণেই জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন ইপিজেডে ৪০টি প্লট নিশ্চিত করে রাখা হচ্ছে। বন্দরের কাছাকাছি চট্টগ্রামের জায়গা খোঁজা হচ্ছে জাপানের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক জোনের জন্য।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্র“তির অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি যাচাই করা হবে শিনজো আবের সফরে। অন্যদিকে, টোকিও সফরে শেখ হাসিনা জাপানের কাছে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, যমুনা নদীর নিচ দিয়ে মাল্টি মুডাল টানেল নির্মাণ, যমুনা নদীর ওপর দিয়ে পৃথক রেলওয়ে সেতু নির্মাণ, বহুমুখী ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ এবং ঢাকার চারপাশের চারটি নদীর পরিবেশগত পুনরুদ্ধারের মতো প্রকল্প বিবেচনার জন্য উত্থাপন করেছিলেন। এসব বিষয়ে এ পর্যন্ত পর্যালোচনা করে জাপান কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা শিনজো আবের সফরে জানা যাবে।

সর্বশেষ খবর