রবিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

চোখ হারানোর শঙ্কায় কলেজ ছাত্র অভি

চোখ হারানোর শঙ্কায় কলেজ ছাত্র অভি

অবরোধকারীদের পেট্রলবোমায় দগ্ধ পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়-বাংলাদেশ প্রতিদিন

সানজিদ হোসেন অভি। পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। থাকেন কলতাবাজার কুঞ্জু বাবু লেনের ১০ নম্বর বাড়িতে। ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বন্ধু হৃদয়সহ গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকায় প্রাইভেট পড়া শেষ করে ফিরছিলেন বাসায়। তারা বঙ্গবাজার এনেক্স মার্কেটের সামনে পৌঁছালে দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি ককটেল অভির মুখে এসে বিস্ফোরিত হয়। চিৎকার দিয়ে রাস্তায় লুটে পড়েন অভি। আহত হন বন্ধু হৃদয়ও। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। হৃদয় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও ঢামেকে ভর্তি রয়েছেন অভি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুখমণ্ডলসহ অভির চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল দুপুরে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ নম্বর বেডে ভর্তি অভির স্যালাইন চলছিল। পুরো মাথাজুড়ে সাদা ব্যান্ডেজ। বেডের দুই পাশে ৫-৬ জন কলেজ বন্ধু বসে আছেন। তারা অভির দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিলেন। বেডের পাশেই অভির মা নুরজাহান বেগম শুধু কাঁদছিলেন। অভির মা জানান, তিন মাস আগে বড় মেয়ে সালমা বেগম ডেলিভারির সময় মারা যান। মেঝ ছেলে অভি গত বুধবার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি। অভির বাবা দেলোয়ার হোসেন কোতোয়ালি থানা এলাকায় দিনে সবজি এবং রাতে ডিম বিক্রি করে পরিবারের ভরণপোষণ চালান। তিনি বলেন, প্রতিদিন অভির চিকিৎসা বাবদ ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অভি কথা বলতে না পারলেও শুনতে পারে। কাগজে লিখে সব কথার উত্তর দেয়। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করে। কাগজে লিখে পানি খেতে চায়। কিন্তু মুখমণ্ডল ঝলসে যাওয়ায় এবং ব্যান্ডেজ থাকায় খেতে দিতে পারছি না। তার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না। অভি পুরান ঢাকার সুরিটোলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কবি নজরুল সরকারি কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন। ৩-৪টি প্রাইভেট পড়িয়ে পড়াসহ নিজের খরচ চালাতেন। প্রসঙ্গত, অভির মতো ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ১২ জন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সিদ্দিকুর রহমান নামে একজন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) এবং অমূল্য চন্দ্র বর্মন, শফিউল আলম খালেক ও সেলিম হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া দগ্ধ অন্য আটজন ঢামেকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা অনেকটা সুস্থ হওয়ার পথে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা হরতাল-অবরোধে সহিসংতার শিকার হয়েছেন এই দগ্ধরা।

সর্বশেষ খবর