শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

নাশকতায় এলাকা অদল-বদল কৌশল

নতুন কৌশলে চলছে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। এই কৌশল অনুযায়ী এক জেলার জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা অন্য জেলায় যাচ্ছে। রাজধানীতেও ঘন ঘন পরিবর্তন করা হচ্ছে ক্যাডার। অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত এলাকার প্রশিক্ষিত ক্যাডার পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই কৌশলে দেশজুড়ে চালানো হচ্ছে নাশকতা-সহিংসতা।
নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা প্রত্যেক জেলায় ব্যবসায়িক নেতা বা বিত্তশালীদের সহায়তা নিচ্ছে। অনেক ক্যাডার এ ধরনের প্রভাবশালীদের বাসা-বাড়িতেও অবস্থান করছে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা মেসেও অবস্থান হচ্ছে অনেকের। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও অবস্থান করছে কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে ক্যাডাররা পাঞ্জাবি ছেড়ে পরছে জিন্স ও টি-শার্ট। দাড়ি ছেঁটে রাখছে গোঁফ। ফলে দেখে বোঝার উপায় থাকছে না, এরা জামায়াত-শিবির ক্যাডার। এসব কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী মহল। সূত্র জানায়, গ্রেফতার এড়াতে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে।  
নির্ভরযোগ্য এক সূত্র জানায়, জামায়াতের নীতি-নির্ধারকদের কাছে খবর রয়েছে, বিভিন্ন হামলা-নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের টেলিভিশন চ্যানেল ফুটেজ, পত্রিকার ছবি, গ্রেফতারকৃত নেতাদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ইত্যাদি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী মহল জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের চিহ্নিত করছে। নেতা-কর্মীর প্রায় পুরো তালিকা এবং ছবিই এখন পুলিশ প্রশাসনের হাতে। তাই গ্রেফতার এড়াতে ক্যাডারদের এলাকা অদল-বদল করতে বলা হয়েছে। আরেক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে নাশকতার ঘটনা ঘটানোর জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে আনা ক্যাডারদের। চট্টগ্রাম কলেজ, মুহসীন কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হোস্টেলে থাকা অনেক ক্যাডার, নেতা-কর্মীই এখন রাজধানীর ব্যবসায়িক ও প্রভাবশালীদের বাসায় ঠাঁই নিয়েছে। নড়াইলসহ আশপাশের এলাকা থেকেও এসেছে জামায়াত-শিবিরের একটি অংশ। অন্যদিকে রাজধানীর পল্টন, মগবাজার, কাঁটাবন, মিরপুরসহ আশপাশের এলাকার জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারা দেশে। সূত্র জানায়, রাজধানী থেকে যাওয়া জামায়াত-শিবিরের একটি বড় অংশ চট্টগ্রামের বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, কর্নেল হাট, শেরশাহ কলোনি, চকবাজার, দেওয়ান বাজার, আগ্রাবাদ, ছোটপোল, মনসুরাবাদ, পতেঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। বেশ পাল্টে আধুনিক চলাফেরার মাধ্যমে তারা সহজেই সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গেছে। আরও জানা গেছে, যোগাযোগ রক্ষার জন্য নেতারা এখন আর মোবাইল ফোন ও ই-মেইল ব্যবহার করছেন না। তার বদলে তারা নিজেরাই অথবা নিজেদের কাউকে পাঠিয়ে সংযোগরক্ষাসহ খবর আদান-প্রদান করছে। সূত্র জানায়, এই কৌশলে পরিকল্পনাকারী নেতাদের নির্দেশমতো পথচারীর বেশে বিভিন্ন স্থান থেকে নির্ধারিত সময় ক্যাডাররা এক জায়গায় হাজির হচ্ছে। জড়ো হয়েই তারা ঝটিকা মিছিল, অথবা নাশকতা চালানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে। সূত্র মতে, প্রতিদিনই শিবিরে নতুন নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। পাতলা কাপড়ের ব্যানার শরীরে লুকিয়ে রেখে চলাফেরা করছে। নতুন এলাকায় গিয়ে সুযোগ বুঝে দুই-তিন মিনিটের মিছিল করছে তারা। এ প্রসঙ্গে নয়া পল্টনের পল্টন টাওয়ারের সামনের এক মুদি দোকানি জানান, ‘গত বুধবার একটি গাড়ি থেকে কয়েকজন অপরিচিত যুবক নেমে একটি ব্যানার নিয়ে মিছিল শুরু করে। অন্য একজন ক্যামেরা হাতে ছবি তোলে। তিন-চার মিনিটের মধ্যে মিছিল শেষ করে পালিয়ে যায় তারা।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (চট্টগ্রাম জামায়াতের) এক কর্মপরিষদ সদস্য জানান, ‘সারা দেশে জামায়াতের শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। আমরা কোতোয়ালি এলাকা থেকে কর্মী পাঠাচ্ছি হালিশহর এলাকায়। আর হালিশহর থেকে পাঠানো হচ্ছে চান্দগাঁও থানা এলাকায়। মূলত স্থানীয় শিবির কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় মিছিল না করে নতুন এলাকায় যাচ্ছে। সেখানে মিছিলকারীদের কেউ শনাক্ত করতে পারছে না।’

সর্বশেষ খবর