শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

শিক্ষক দম্পতির কমলার বাগান

শিক্ষক দম্পতির কমলার বাগান

সমতলের বেলে-দোআঁশ মাটিতে সুস্বাদু কমলা উৎপাদন করে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এক শিক্ষক দম্পতি। এর স্বাদ ও মান ভারত-ভুটান থেকে আমদানি করা কমলার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে যারাই এই কমলা খেয়েছেন তারাই পেয়েছেন মধুর সেই স্বাদ। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ফাতেমা-খলিলুরের কমলার চাষ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলাজুড়ে আলো ছড়িয়েছে এ বাগানটি। এ অঞ্চলের কৃষকদের মঙ্গা জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছে এ দম্পতি। উপজেলার মোজাম্মেল হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ও পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুনের ওই কমলা বাগানে প্রায় প্রতিদিনই আসেন লোকজন। শিক্ষক দম্পতির এই কমলা বাগানে প্রায় ১৫২টি গাছে ফল ধরেছে এ বছর। ৮০ শতাংশ জমির সেই বাগানে প্রতিটি গাছে কমবেশি ফল দেখা গেলেও মা গাছটিতে প্রায় হাজারখানেক কমলা এসেছে। যার আকার ভারত আর ভুটানের কমলার মতো এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। শিক্ষক খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২০০২ সালের দিকে তার বাড়িতে এক বড় ভাই বেড়াতে এসেছিলেন। সঙ্গে করে এনেছিলেন ভুটানি কমলা। সেই কমলা খেয়েই তার মনে বাগান গড়ার স্বপ্ন জাগে। সেই কমলার বীজ বাড়ির আঙিনায় পুঁতে রাখে খলিল-ফাতেমা দম্পতি। কিছুদিনের মধ্যেই সেখান থেকে  চারা গজিয়ে উঠে। বুকের মাঝে হঠাৎ জেগে ওঠে কমলা চাষের স্বপ্ন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সেই চারায় নিবিড় পরিচর্যা শুরু করেন। এ সময় আশপাশের কেউ দেখে বিষয়টি নিয়ে হাসি-তামাশা করলেও সেই চারা গাছে যত্ন নিতে পিছপা হয়নি ওই দম্পতি। প্রায় চার বছরের মাথায় ফল আসে মা গাছটিতে। তা হুবহু সেই ভুটানি কমলার মতো, রং আর স্বাদে বিন্দুমাত্র পার্থক্য ছিল না। ঠিক তখনই শুরু হয় মা গাছটি থেকে আরও চারা করার প্রক্রিয়া। অবশেষে দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর প্রবল ইচ্ছা শক্তিতে গড়ে ওঠে খলিল-ফাতেমার স্বপ্নের বাগান। ফাতেমা বেগম জানান, এ জেলার মঙ্গাকে নিয়ে মানুষ তামাশা করে। তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী স্বপ্ন দেখি কীভাবে এ মঙ্গা নামক শব্দ থেকে নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের রক্ষা করা যায়। সেই প্রচেষ্টা থেকেই কমলার চাষ ছড়িয়ে দিতে সেই বাগানের অঙ্কুুর থেকে চারা গাছের একটি সমৃদ্ধ নার্সারি গড়ে তুলেছি। সস্তা দামে বিক্রি করছি এসব চারা গাছ।
তার কথার রেশ ধরেই খলিলুর রহমান বলেন, ফাতেমার বপন করা গাছ থেকে এবার হাজারেরও অধিক ফল পেয়েছি। বিক্রির চিন্তা না করে এলাকাবাসী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে হাতীবান্ধার ইউএনও, কৃষি অফিস, স্কুলের শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছি। যাতে সবাই কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও ওই বাগানে গিয়ে কমলা খেয়ে দেখেছি। তাতে সত্যি ভারত ও ভুটানের সুস্বাদু কমলার মতোই স্বাদ রয়েছে। এখানের মাটির অম্লতা সঠিক রয়েছে কমলা চাষের জন্য। তাই হাতীবান্ধার বেলে-দোআঁশ সমতল মাটিতে এই কমলা চাষ ব্যাপক সাফল্য আনবে।
এদিকে মা গাছের বীজ থেকে করা নার্সারি থেকে এ বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছে ওই শিক্ষক দম্পতি। প্রতি পিস চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে। আর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বাগানের কমলা খেয়েই সেই চারা কিনছে অসংখ্য মানুষ। এই বিক্রি অব্যাহত থাকলে আগামী বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন খলিলুর রহমান ও স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। উপজেলা কৃষি মেলা ২০১৪-এ পুরস্কৃত হয়েছে এই দম্পতি।
এ ব্যাপারে হাতীবান্ধার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই বাগানের কমলা খেয়ে সত্যি খুব স্বাদ পেয়েছি। এই অঞ্চলের সুস্বাদু এই কমলা চাষ আমাদের দেশে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

সর্বশেষ খবর