নড়াইলে কলেজপড়ুয়া বধূকে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এ ব্যাপারে অবশেষে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে। নির্যাতিত গৃহবধূ ববিতা নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামের ছালাম শেখের ছেলে সেনা সদস্য শফিকুল শেখের সঙ্গে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্যার মেয়ে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের øাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ববিতার (২১) ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর ববিতার স্বামী শফিকুল শেখ ও তার শাশুড়ি তাকে তুলে নেবেন না বলে টালবাহানা শুরু করেন। শফিকুলও ববিতার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ববিতা এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েন। শেষে ববিতা আদালতের শরণাপন্ন হন। এতে শফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ২৯ এপ্রিল শফিকুল বাড়ি আসেন এবং ববিতাকে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন মীমাংসার জন্য। এতে ববিতা খুশি হয়ে রাতেই স্বামীর বাড়িতে যান। পরদিন সকাল ৭টার দিকে শফিকুল, ভাসুর হাসান শেখ, শ্বশুর ছালাম শেখ, শাশুড়ি জিরিন আক্তার, চাচাশ্বশুর কালাম শেখ, প্রতিবেশী নান্নু শেখ মিলে ববিতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করেন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে পাশবিক নির্যাতন চালানোর এক পর্যায়ে ববিতা অজ্ঞান হয়ে যান। এ অবস্থায় তাকে বাজারে নিয়ে একটি দোকানে আটকিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ববিতাকে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নড়াইল সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গুরুতর আহত ববিতা বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার সাতজনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার ঘটনার এজাহারভুক্ত আসামি কালামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল নড়াইল সদর হাসপাতালে নির্যাতিত ববিতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার স্বামী শফিকুল যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তাকে মারধর করতেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন যৌতুকের দাবিতে। লোহাগড়া থানার (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ববিতার মা খাদিজা বেগম।