শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদেশনির্ভরশীলতা কমছে চিকিৎসায়

একসময় সুচিকিৎসার জন্য আমাদের বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভর করতে হতো। প্রচুর টাকা খরচ করে বিদেশ যেতে হতো চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সময় বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব উপকরণ এখন বাংলাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে। দেশে অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তৈরি না হলেও জার্মানি, চীন, বেলজিয়াম ও কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এখন আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সব যন্ত্রপাতি আমাদের দেশে আনা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন দেশের চিকিৎসা খাত আধুনিক যুগে প্রবেশ করছে তেমনি চিকিৎসার জন্য আমাদের বিদেশ নির্ভরতা কমছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে সপ্তম মেডিটেক্স বাংলাদেশ-২০১৫ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এতে রোগী ও সংশ্লিষ্টদের পৃথিবীর আধুনিক সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচয় করানো হচ্ছে। এ প্রদর্শনী চলবে ৯ মে পর্যন্ত। এতে ১৯টি দেশের প্রায় ১০০টির অধিক স্টল অংশ নিয়েছে।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপির কষ্টকে কিছুটা কমিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন BARD কেমো পোর্ট। এর মাধ্যমে যেসব ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে ঘন ঘন ইনজেকশন পুশ করতে সমস্যা হয় তাদের কম কষ্ট দিয়ে শরীর থেকে রোগের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মাধ্যমে রোগীর শরীরে সহজে কেমোথেরাপি দেওয়ার পাশাপাশি স্যালাইনও পুশ করা যায়। এদিকে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ন্যাশনাল ইলেকট্রোকেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি ইলেকট্রো সার্জিক্যাল ইউনিট ইউনিভার্সেল সার্জারি, অটোট্র্যাকশন, ডিজিটাল মাসেল সিমুলেটর, ইলেকট্রো আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, ডিজিটাল ল্যাব রোটেটরাসহ ইত্যাদি চিকিৎসা যন্ত্রের প্রদর্শনী করছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, আমরা যেসব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তৈরি করছি তা ইন্ডিয়া ও চীনের চেয়ে মানে অনেক ভালো আর দামও কম। আমাদের তৈরি যন্ত্র দিয়ে এখন দেশের ৬০% চাহিদার জোগান দিতে পারছি। ইচ্ছা আছে শিগগিরই দেশের তৈরি যন্ত্রপাতি বিদেশে রপ্তানি করার। এ প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি সার্জিক্যাল যন্ত্র আছে যা রক্তপাত ছাড়াই অপারেশনের কাজ করতে সহায়ক। আধুনিক চিকিৎসা সহায়ক যন্ত্রপাতির প্রসারে কাজ করছে আরেকটি প্রতিষ্ঠান টেকনোকিট। প্রদর্শনীতে তারা এনেছে ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র। আধুনিক এ যন্ত্রটি দিয়ে শরীরের ফ্যাট, পানি, বিএমআই ও পেশির অনুপাত ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ যন্ত্রটিকে স্মার্ট মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত করে ব্লুটুথের মাধ্যমে ওজন মাপার যন্ত্রে একজনের শরীরের প্রাপ্ত তথ্য মোবাইলে পাঠানো যাবে। জার্মানি থেকে আনা এলইডি স্ক্রিনের নতুন এ যন্ত্রটির দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।
এ প্রতিষ্ঠানটির সেলস ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান জানান, যে পরীক্ষাগুলোর জন্য আগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হতো। সে পরীক্ষাগুলোই এখন অল্প সময়ে ঘরে বসেই করা যাচ্ছে। ঐডঅঞওগঊ নামের আরেকটি চীনা প্রতিষ্ঠান এনেছে ব্লাড কালেকশন সিস্টেম নামের আধুনিক একটি যন্ত্র। আগে যেখানে সিরিঞ্জের মাধ্যমে রোগীর দেহ থেকে রক্ত নিতে হতো। এ যন্ত্রের মাধ্যমে একটি ছোট নিডেলের মাধ্যমে ভ্যাকুয়ামে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। কঅও ঢওঘ নামের আরেকটি চাইনিজ প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে ফুল ডিজিটাল কালার আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানারের আধুনিক সব যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির সেলস ম্যানেজার ক্যামি জানান, এর আগেও তারা বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল ল্যাব এক্সপোতে অংশ নিয়েছেন। এখানে এসে তারা সংশ্লিষ্ট আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছেন।  প্রদর্শনীর আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেমস্-এর সহযোগী ব্যবস্থাপক হাসনাত মোহাম্মদ শাহরিয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মাত্র ১ শতাংশ দেশে তৈরি হচ্ছে। এ যন্ত্রপাতিগুলোর জন্য আমাদের বাইরের দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর