সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

বন্যায় বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি

দেখা দিয়েছে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট, ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোয় মানুষের দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট। রাস্তাঘাট নষ্ট এবং বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চকরিয়া : গতকাল ভোর রাত থেকে বৃষ্টি থামায় চকরিয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে যেখানেই পানি কমছে সেখানেই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। বিশেষ করে বেরিয়ে আসছে বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট। একেবারেই মিশে গেছে কয়েকশ মাটির রাস্তা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার সড়কের সিংহভাগ স্থানে ছোট-বড় গর্ত হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। চকরিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ জানান, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নে বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ঘেঁষা ইউনিয়ন থেকে পানি কমতে শুরু করার পর দেখা যাচ্ছে কাঁচা রাস্তা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। ব্রিক সলিং ও পাকা সড়ক কোথাও ভেঙেছে এবং সিংহভাগ স্থানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি কমায় উজানের ইউনিয়ন সুরাজপুর-মানিকপুর ও কাকারার ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। এ দুটি ইউনিয়নের প্রতিটি সড়কই ভেঙে গেছে। মাটির রাস্তা মিশে গেছে আবাদি জমির সঙ্গে। প্রপার কাকরায় গাইড ওয়াল পুরোপুরি মেরামত না হওয়ায় নদীর তীর থেকে ঢলের তোড়ে সরে গেছে ব্লক। ফলে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মাতামুহুরী নদীর কাকারা ও সুরাজপুর-মানিপুর অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। জানা গেছে, উপর্যুপরি চার দফা বন্যায় কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৬ লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসি মানুষ ভুগছেন খাদ্য সমস্যায়। দুর্গত এলাকায় রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। নোয়াখালী : নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার হাতিয়া, সুবর্ণচর, সদর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার ৭৯টি গ্রামে ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। প্রশাসনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা যায়, জেলার কৃষিক্ষেত্রে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর বীজতলা, রোপা আমন ২ হাজার ৮০০ হেক্টর, ৯০০ হেক্টর আউশ এবং ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর সবজি, মৎস্য খাতে ১৯ হাজার ৫০০ খামার ও পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। ১ হাজার কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে পানির নিচে রয়েছে। বাগেরহাট : বাগেরহাটে নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে ও সেগুলো ভেঙে গতকালও নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী হাটবাজার, মিল, কল-কারখানা, মাছের ঘের, পুকুর, ফসলি জমিসহ কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দৈবজ্ঞহাটি ও নাজিরপুর প্রকল্পের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও সদর উপজেলার যাত্রাপুুর বাজার এবং সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকেছে। ফলে জলমগ্ন ওইসব এলাকার সহস্রাধিক পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। মুক্তিযোদ্ধা সরদার বজলুর রহমান জানান, গতকাল দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে ভৈরব নদের তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কোড়ামারা মধ্যপাড়া এলাকার কয়েকশ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার মানুষ খাদ্য সংকট এবং রোগবালাইয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কুমিল্লা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, সদর, বুড়িচং ও সদর দক্ষিণ এলাকা বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে নাঙ্গলকোট উপজেলার অবস্থা ভয়াবহ। এ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার লোকের বাড়িঘর ও ফসলাদি নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া লাকসাম উপজেলার প্রায় ২২ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলার পানিবন্দী আছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ। সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় আছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়ায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে দুই ইউনিয়নের ২৮ গ্রাম। কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সাগর-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে উপজেলার মহিপুর ও লালুয়া ইউনিয়নের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে দফায় দফায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পুকুর, মাছের ঘের ও ফসলি জমি ৩-৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ওইসব গ্রামের প্রতিটি পরিবারেরই রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে  গেছে। গবাদি পশু নিয়ে গ্রামবাসী পড়েছেন বিপাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ১০০ মিটার বাঁধ ধসে গেছে। ফলে নদী ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছেন সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ২৭ হাজার মানুষ। জানা গছে, পদ্মার প্রবল পানির স্রোতে গত বুধবার চরবাগডাঙ্গা অংশে ৪ নম্বর বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার এবং ১০ নম্বর বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। অন্যদিকে ১০ নম্বর বাঁধের পাশেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি : শহরের শান্তিনগর, জালিয়াপাড়া, রসুলপুর, বরকল উপজেলার কলাবুনিয়া, ছোট ও বড় হরিণাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। এদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ কমাতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ের ১৬টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে খুলে দেওয়া গেট দিয়ে সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কাপ্তাই হ্রদ থেকে কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সর্বশেষ খবর