শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আশার আলো ময়মনসিংহে

বাস্তবায়িত হলো দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সংগ্রাম

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

দেশের অষ্টম বিভাগে উন্নীত হয়েছে উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম জেলা ময়মনসিংহ। এ বিভাগের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যেচ্ছেদ পড়লেও নতুন বিভাগের আনন্দে উদ্বেলিত চার জেলার বাসিন্দারা। উন্নয়ন বৈষম্য নিরসন আর আঞ্চলিক উন্নতির জন্য এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আশার আলো হয়ে উঠেছে নবগঠিত এ বিভাগ। এ জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের এক সময়কার বৃহত্তম জেলা ছিল ময়মনসিংহ। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর আলাদা জেলা হয়। দীর্ঘ ২৭ বছর আগে বৃহত্তর ময়মনসিংহের এ ছয় জেলার সমন্বয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ এ আন্দোলনের সূচনা করে। শুরু থেকেই টাঙ্গাইল ঢাকার সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘না’ জানায়। পরবর্তীতে একই পথ অনুসরণ করে কিশোরগঞ্জ। এ দুই জেলার বিরোধিতার মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ময়মনসিংহ বিভাগ। তাদের বিরোধিতার কারণেই ঝুলে যায় ময়মনসিংহ বিভাগের স্বপ্ন।

সব রাজনৈতিক সরকারই ময়মনসিংহ বিভাগের দাবিকে সমর্থন করে। ময়মনসিংহ বিভাগের গুরুত্ব স্বীকার করেছিলেন দেশের দুই বৃহৎ দলের দুই শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও। ময়মনসিংহে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত জনসভাতেও তারা ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাই এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ ও নিকার সভায় টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জকে বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। এর মাসখানেকের মধ্যেই ময়মনসিংহ বিভাগের গেজেট প্রকাশিত হয়। প্রায় ১০ হাজার ৫৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের, ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৬ জন জনসংখ্যা অধ্যুষিত ময়মনসিংহ বিভাগ এখন এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মাঝে আশার আলো হয়ে উঠেছে। নতুন বিভাগের বাসিন্দা হওয়ায় উচ্ছ্বাস আর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে এখানকার মানুষ। এ প্রসঙ্গে জেলা নাগরিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জন উদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, প্রশাসন ও উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হচ্ছে বিভাগ। বিভাগ হওয়ায় ময়মনসিংহের মানুষজন স্বল্প সময়ে ও সুলভে বিভাগীয় সেবা পাবে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে বিভাগীয় শহরকে নতুন চেহারা দিয়েছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা ময়মনসিংহ শহরে তার নেতৃত্বেই শুরু হয় পরিকল্পিত উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। নতুন শহর ও সুন্দর শহর গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করা সৃষ্টিশীল এ মেয়র ময়মনসিংহ বিভাগে উন্নীত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি বলেন, সবাই আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যাই আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ করেছেন। এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়গ্রোথিত আবেগ ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করে তিনি অনন্য এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ময়মনসিং-৪ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ময়মনসিংহবাসীর এ যৌক্তিক দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি সেই কথা রেখেছেন, এমনটি মনে করে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আহমেদ। ময়মনসিংহ বিভাগের মাধ্যমে হতাশাবিদ্ধ এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমাদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক এ সিদ্ধান্ত পরিকল্পিত উন্নয়নেরই ধারাবাহিকতা। অভিনন্দন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। কেউ কেউ বলছেন, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ বিভাগে না আসায় এ বিভাগের রূপ হয়েছে পোকায় খাওয়া বিভাগের মতন। কিন্তু এমনটি মনে করেন না প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ওই দুই জেলার বাসিন্দারা সম্পর্কোচ্ছেদ করতে চাইলেও তারা আমাদের ভুলতে পারবেন না। আমাদেরকে তাদের মনে পড়বেই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর