শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

একদৃষ্টিতেই ৯০ কিলোমিটার

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

একদৃষ্টিতেই ৯০ কিলোমিটার

সেন্ট্রাল ট্রেন কন্ট্রোল রুমে বসানো হয়েছে কম্পিউটার, স্বয়ংক্রিয় মেশিন ও বিশালাকারের এলইডি মনিটর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে। পরিবর্তন হয়েছে গতানুগতিক ধারার। শুরু হয়েছে সেন্ট্রাল ট্রেন কন্ট্রোল (সিটিসি) রুমের কার্যক্রম। এ রুমে বসানো হয়েছে কম্পিউটার, স্বয়ংক্রিয় মেশিন, বিশালাকারের চারটি এলইডি মনিটর। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারের রেললাইন। একদৃষ্টিতেই সরাসরি মনিটরিং করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে থাকছে লেভেল ক্রসিংও। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নতুন করে বসানো মনিটর দেখেই ট্রেন কন্ট্রোলাররা লাল-সবুজ পেন্সিলের কালিতে গ্রাফ কাগজে আঁকছেন। প্রতি আট ঘণ্টা পরপর গ্রাফ চার্ট পরিবর্তন করে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিজন কন্ট্রোলারের সামনে বসানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিফোন। একমাত্র সাইবার বিপর্যয় ছাড়া এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না। রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেলকে আরও গতিশীল ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ট্রেন কন্ট্রোলিংয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি। কোন ট্রেন, কোন স্থানে অবস্থান করছে, সেটি আরও কঠোর মনিটরিংয়ে রাখতে আধুনিক কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবস্থা বাড়ানো হবে পর্যায়ক্রমে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লেভেল ক্রসিংয়ে নিরাপত্তাপ্রহরীর পাশাপাশি সিসিটিভিও বসানো হবে। ইতিমধ্যে ফেনীতে সিসিটিভি বসানো হয়েছে, যা চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি মনিটর হচ্ছে। এগুলো বসানো হলে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধেও সুফল আসবে। তিনি বলেন, রেলের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও অব্যাহত আছে। সম্প্রতি রেলভবন পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করতে বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, অত্যাধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ট্রেনের গতিপথ সঠিকভাবে নির্ণয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আধুনিক এ কন্ট্রোল সিস্টেমে ট্রেন চলাচলে ফিরছে গতিও। ট্রেনের দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংয়ে বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে বসানো হবে। সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে পাহাড়তলীর সিটিসি রুম থেকে। এ ছাড়া সিআরবি ও ঢাকা ডিভিশনেও আছে পৃথক দুটি কন্ট্রোল রুম। বর্তমানে আধুনিক এ কন্ট্রোল ব্যবস্থায় তিন মাস ধরেই চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন মনিটর হচ্ছে সিটিসি সিস্টেমে। ফলে রেল চলাচলে যেমন গতি বাড়ছে, তেমনি কমছে শিডিউল বিপর্যয়। তবে জনবল সংকটে নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়।

পূর্বাঞ্চলের প্রধান ট্রেন কন্ট্রোলার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আধুনিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা ও ডাবল লাইনের সুফল পাওয়ায় রেল চলাচলে গতি এসেছে। কন্ট্রোলে বসানো মনিটরে ট্রেনের অবস্থান দেখেই চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া যাচ্ছে। তবে রেলে গতি আনতে স্টেশন যেমন প্রয়োজন, তেমনি নিয়ন্ত্রণে দরকার সিটিসি সিস্টেমের। ট্রেন কন্ট্রোলার মহিউদ্দিন মুকুল ও সাঈদ খোকন জানান, নতুন অফিসে সিটিসি চালু হওয়ার পর থেকে এক দিনের জন্যও এ অফিসের মনিটর বন্ধ হয়নি। রাতদিন কন্ট্রোল রুমের বাতি জ্বলেছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটরের ব্যবস্থাও আছে। জনবল সংকট প্রসঙ্গে চিফ পাওয়ার কন্ট্রোলার শংকর কুমার দাশ বলেন, ‘প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে রেলের পাওয়ার কন্ট্রোল পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিআরবিতে চারজন করে হলেও ১২ জন পাওয়ার কন্ট্রোলার ও একজন করে তিনজন চিফ কন্ট্রোলার থাকা প্রয়োজন। আমি নিজেই পূর্বাঞ্চলের ১০১টি পাওয়ার ইঞ্জিন তদারক করছি।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত মোট ৩৭টি স্টেশন আছে। এ রুটে প্রতি ১০ মিনিট পরপরই একটি করে স্টেশন। চলতি বছরের ১২ জুলাই সিটিসি সিস্টেম চালু হওয়ার আগে স্টেশনমাস্টারদের সহযোগিতায় (সিবিএস) সিস্টেমে রেললাইনের নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এখন সিটিসি সিস্টেমে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করায় রেলে গতি এসেছে। এখন প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বেগে রেল চলছে।

সর্বশেষ খবর