শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

অভিভূত ১২ দেশের মন্ত্রী-সচিব

আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বিশ্বের বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে অভিভূত হলেন বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) সেক্রেটারি জেনারেল তালেব রিফাইসহ এশিয়ার বৌদ্ধ হ্যারিটেজ-সমৃদ্ধ ১২ দেশের পর্যটন মন্ত্রী, সচিব ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল দুপুরে এ দলটি হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজার থেকে প্রথমে বাগেরহাটের বিএনএস মংলা নৌ ঘাঁটিতে অবতরণ করে। বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে দলটি পরে মংলা নৌ ঘাঁটি থেকে ‘টাইগার ট্যুর’ নামের বিশেষ একটি পর্যটন জাহাজে করে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের হারবাড়িয়ায় যায়। পরে তারা সুন্দরবনের কমরজলে কুমির ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ঘুরে দেখে। প্রায় তিন ঘণ্টা টাইগার ট্যুর জাহাজের ডেকে বসে বিদেশি এসব অতিথি সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগকালে সুন্দরবনবিষয়ক সব তথ্য মাল্টিমিডিয়া প্রেজেনটেশন করেন সুন্দরবন খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক সুনিলকুমার কুণ্ডু। এ সময় তাদের জানানো হয়, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বন এখন ‘ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড’। প্রশাসনিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের চারটি রেঞ্জের ৫৮টি কম্পার্টমেন্টে বিভক্ত বাংলাদেশের সুন্দরবন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় সুন্দরবন প্রাকৃতিকভাবে ছয়বার তার রূপ বদলায়। শরণখোলা রেঞ্জের কটকা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার রয়েছে অপূর্ব সুযোগ। সুন্দরবনে ১০৬টি বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দেড় লাখ চিত্রল ও মায়া হরিণ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন ও ২ প্রজাতির তিমিসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী ও পাখি রয়েছে ৩০০ প্রজাতির। ‘সুন্দরী’ ‘গেওয়া’ ‘পশুর’ ‘গরান’সহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। জালের মতো করে ছড়িয়ে রয়েছে ৪৫০টি ছোট-বড় নদ-নদী ও খাল। সুন্দরবনের এসব জলভাগে রয়েছে রুপালি ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত ‘শিলা স্কাস্প’সহ ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক। বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে সুন্দরবনের সব সম্পদ আহরণ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি প্রায় ২ লাখ ইকো-ট্যুরিস্ট (প্রতিবেশ পর্যটক) সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। সুন্দরবন সফরে ২০ সদস্যের এ প্রতিনিধি দলে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল তালেব রিফাই; চীন, ভুটান, ভারত, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, জাপান, ভিয়েতনামের পর্যটন মন্ত্রী, সচিব; রাষ্ট্রদূত; বৌদ্ধ ধর্ম ও কৃষ্টি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন।

দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল তালেব রিফাই বলেন, বাংলাদেশ সফরে তার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, সচিবরা টেকসই উন্নয়নের প্রশ্নে আন্তরিক এবং তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। গতকাল বিকালে সুন্দরবন পরিদর্শন শেষে দিগরাজ নৌ ঘাঁটিতে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে অভিভূত হয়েছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান। বৌদ্ধ পর্যটন সার্কেলের উন্নয়নবিষয়ক দুই দিনের এক কর্মশালায় ঢাকায় আসা এ প্রতিনিধি দল গতকাল সুন্দরবন ও কক্সবাজার পর্যটন এলাকা পরিদর্শন করে। বিকালে দলটি ঢাকার উদ্দেশে হেলিকপ্টারযোগে মংলা ত্যাগ করে।

সর্বশেষ খবর