শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে তুরস্কের সঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশটির কাছে তৈরি পোশাকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের শর্ত দেওয়া হতে পারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। অবশ্য তুরস্কের দিক থেকেও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি খাতে বাজারসুবিধা চাইছে দেশটি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য একটি খসড়া পাঠিয়েছে তুরস্ক। ওই খসড়ার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করতে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কে যেসব পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধসহ বেশ কিছু পণ্য রয়েছে বিবেচনায়। এ ছাড়া মোড-ফোরের আওতায় দেশটিতে শ্রম রপ্তানির বিষয়টি এফটিএর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষি খাতে ঢুকতে চাইছে তুরস্ক। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মনোজ কুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এফটিএ করার জন্য তারা (তুরস্ক) যে খসড়াটি পাঠিয়েছিল তার টার্মস অব রেফারেন্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি। এরপর এটি তাদের কাছে পাঠানো হবে। আমাদের শর্তে তুরস্ক সম্মত হলে আগামী জানুয়ারিতে তাদের সঙ্গে ঢাকায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে।’ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলেও তুরস্কের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তুরস্ক তার দেশের শিল্প সুরক্ষার অজুহাত তুলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ১৭ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে ২০১০ সালে। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি দেশটির সরকার অনলাইনে নোটিস দিয়ে জানায়, তারা তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষার জন্য তৈরি পোশাক শিল্প আমদানির ওপর ‘সেফ গার্ড ডিউটি’ আরোপ করতে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানার পর পার্টি হয়ে আপত্তি জানায়। পাশাপাশি বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পার্টি হয়ে এ ব্যাপারে তুরস্কে আপত্তিপত্র পাঠায়। কিন্তু ওই আপত্তি কানে তোলেনি তুরস্ক। শেষে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্ক সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ দেখায়। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এফটিএ নিয়ে দুটি দেশই আলোচনা চালিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের পরপরই তুরস্ক এফটিএ করার জন্য বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়ে একটি আগ্রহপত্র পাঠায়। এদিকে তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে ট্যারিফ কমিশনের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ট্যারিফ কমিশন এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই এফটিএর মাধ্যমে যদি তুরস্ক কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করানো যায়, তবে তা লাভজনক হবে। এর ফলে দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

সর্বশেষ খবর