শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাঠের ভোটযুদ্ধ প্রস্তুতিতে দুই দল

প্রার্থী ঠিক করতে বিভাগভিত্তিক বোর্ড করছে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

মাঠের ভোটযুদ্ধ প্রস্তুতিতে দুই দল

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিচ্ছে। সে জন্য তারা এ নির্বাচনে বেশির ভাগ পৌরসভায় জয়ী হতে চাইছে। তাই কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে দলটি শিগগিরই বৈঠকে বসছে। এ বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের অবস্থানসহ দলটির কোন পর‌্যায়ের নেতারা কীভাবে কোন দায়িত্ব পালন করবেন তাও চ‚ড়ান্ত করা হবে।

সূত্রমতে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে সাত বিভাগে সাতটি মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হচ্ছে। বোর্ডের প্রধান হবেন কেন্দ্রের একজন সিনিয়র নেতা, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সদস্য সচিব আর জেলা-উপজেলা এবং পৌরসভার শীর্ষ নেতারা থাকবেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। মতামত গ্রহণ করা হবে স্থানীয় দলীয় এমপির। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রমতে, দলীয় প্রতীকের এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বিএনপি যোগ দেবে এটাই মনে করে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। শাসক দলের প্রত্যয়Ñ বিএনপি নির্বাচনে এসে কিছুতেই যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়।   আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য দলের সংসদীয় বোর্ডেরও প্রার্থী বাছাইয়ের এখতিয়ার নেই। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিভাগীয় পর‌্যায়ে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হতে পারে। প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় নির্দেশনা জানিয়ে তৃণমূলে চিঠি ইস্যু করবেন। সে চিঠিতে জেলা ও পৌর পর‌্যায়ের কমিটিগুলোকে সুপারিশ পাঠাতে বলা হতে পারে। এ ছাড়াও স্থানীয় পর‌্যায়ের এ সুপারিশের পাশাপাশি পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনও করা হতে পারে।

এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তফসিল ঘোষণা করা না হলেও প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ভিতরে ভিতরে আলোচনা চলছে। একাধিক নেতা বিভাগীয় পর‌্যায়ে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করতে সম্মত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জেলা-উপজেলা বা পৌরসভা পর‌্যায়ে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দুই বা ততধিক গ্রুপ আবার দলীয় এমপিদের নিজস্ব বলয় রয়েছে। সেসব বলয়ের কর্তৃত্ব ঠিক করতে সঠিক প্রার্থী এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হতে পারে। যে কারণে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিলে একদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল যেমন ঠেকানো যাবে, তেমনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে মাঠে নামানো সহজ হবে।  আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচনের যে পদ্ধতি আছে, আওয়ামী লীগ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সে পদ্ধতিই অনুসরণ করবে। তার আগে রূপরেখা চ‚ড়ান্ত করার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে। তিনি বলেন, প্রার্থী নির্বাচনে আমরা জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দেব। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী ঠিক করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চ‚ড়ান্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তফসিল ঘোষণা হলেই আমরা চ‚ড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করব। তবে তৃণমূলে কোন নেতার সাংগঠনিক দক্ষতা, সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তা আমাদের কমবেশি জানা আছে।   

পৌর নির্বাচনের দলগত প্রস্তুতি, গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এমন একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিগগিরই আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হবে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ওখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কীভাবে প্রার্থী মনোনয়ন পদ্ধতি। নির্বাচনে জোটগত অবস্থান কী হবে। এ পর্যন্ত আমরা যেটা চিন্তা করেছি, তাতে আমরা দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য প্রতিটি জেলায় পার্লামেন্টারি বোর্ডের আদলে সাত বিভাগে সাতটি বোর্ড গঠন করব। সেই বোর্ড তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে।

সর্বশেষ খবর