শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নানা শঙ্কা থাকলেও প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

নানা শঙ্কা থাকলেও প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি

নানা শঙ্কা সত্তে¡ও ডিসেম্বরে শুরু হওয়া দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যেই দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূল পর‌্যায়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন দলের জেলা কমিটি ও সাবেক সংসদ সদস্যরাও। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর প্রার্থী তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হবে। তবে ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও পৃথকভাবে তালিকা করা হচ্ছে। সমঝোতার ভিত্তিতে কিছু প্রার্থী জোটের শরিকদের পক্ষ থেকে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি।

জানা যায়, মামলা ও গ্রেফতারের খড়গ থাকা সত্তে¡ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে যাওয়ার অলিখিত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। বেগম জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ ইঙ্গিত দিয়ে যান। ১৭ নভেম্বর বিএনপি-প্রধানের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী ১৬ নভেম্বর লন্ডনে টিকিট বুকিংও রাখা হয়েছে। তবে এ মাসের শেষ সপ্তাহেও দেশে ফিরতে পারেন বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। এ কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা বাছাই করে রাখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পৌর কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার পর। দলের নীতিনির্ধারকরাই এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই যেভাবে গণহারে বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাতে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। নানা বাধা সত্তে¡ও আমরা তৃণমূলে খোঁজখবর নিচ্ছি। নির্বাচনে গেলে যথাসময়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ যুক্তরাজ্য বিএনপি সূত্রে জানা যায়, পৌর ও ইউপি নির্বাচন নিয়ে লন্ডনে বিএনপি-প্রধান কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও দিয়েছেন তিনি। তবে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি বিএনপি-প্রধান। লন্ডন বিএনপির এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্তে¡ও শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি বরাবরই অংশ নিয়েছিল। এর আগে সেসব নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভও করেছে। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তবুও নির্বাচনে না যাওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া স্থানীয় সরকারে ক্ষমতার পালাবদল হয় না। যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূল কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়। এ জন্যই খালি মাঠে ক্ষমতাসীনদের গোল না দেওয়ার পক্ষে তারা। নির্বাচনে না গেলে রাজনৈতিকভাবে দলটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন নেতারা। এ ব্যাপারে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল করতে দেওয়া হবে না।’ তৃণমূল বিএনপি সূত্র জানায়, প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে গিয়ে বিএনপি নেতাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অধিকাংশ পৌরসভায় সম্ভাব্য জনপ্রিয় প্রার্থীরা এলাকাছাড়া। কিছু দিন ধরে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতারে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী আটক হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে যুক্ত থাকা হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হলেও তারা মাঠে নামতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কেন্দ্রের। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার জোর করে ভোটের ফল তাদের অনুকূলে নেবে। তার পরও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে, অথবা মামলায় গ্রেফতার হয়ে এখনো কারাগারে আছেন কিংবা গ্রেফতারের ভয়ে প্রকাশ্যে নেই তাদের প্রার্থী না-ও করা হতে পারে। কারণ, প্রার্থী প্রকাশ্যে থাকতে না পারলে ভোটের রাজনীতিতে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তবে জনপ্রিয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত হতে পারে। নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সরকার সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে গণগ্রেফতার শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী ধরপাকড়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘিœত হবে জানিয়ে রিপন বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং প্রচার চালানো দুরূহ হয়ে উঠবে। বিএনপির অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, নির্বাচনী এজেন্ট এবং নির্বাচনী প্রচারের কর্মী-সমর্থকরা এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়ে পড়েছেন। অন্যরাও জুলুম-নির‌্যাতনের আশঙ্কায় এলাকাছাড়া। এটি কি অবাধ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হতে পারে!’

সর্বশেষ খবর