শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আলোর মুখ দেখছে না ইভিএম

গোলাম রাব্বানী

আলোর মুখ দেখছে না ইভিএম

রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু না হওয়ায় দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তা ব্যবহার নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম আলোর মুখ দেখছে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। হিমঘরেই রাখতে হচ্ছে ইসির কাছে গচ্ছিত সব ইভিএম মেশিন।

স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কথা ইসির পক্ষ থেকে বাব বার বলা হলেও দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হতে যাওয়ায় তা নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনের জন্য স্বল্প সময় থাকায় ইসি এ বিষয়ে দলগুলোর মতামতও নিতে পারছে না। ফলে আসন্ন পৌর নির্বাচন ব্যালট পেপারেই হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন করতে হলে ইসির হাতে তফসিল দেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ সময় আছে বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের ঐকমত্য না থাকায় ইভিএম চালু হয়নি, দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হলে নতুনভাবে দলগুলোর মতামত প্রাধান্য দিতে হবে, কিন্ত ইসির হাতে সে সময়ও নেই। এর আগে নির্দলীয় সিটি ও পৌরসভা নির্বাচনে ছোট্ট পরিসরে এ প্রযুক্তি ব্যবহারও হয়েছে। ধীরে ধীরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদেও ইভিএম চালুর কথা ছিল। কিন্তু দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হতে যাওয়ায় ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন খোদ ইসি। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে নরসিংদী পৌরসভায় সব কটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়। তাতে এসএমএসের মাধ্যমে মাত্র ১ ঘণ্টার ব্যবধানে ফলও চ‚ড়ান্ত করার নজির স্থাপন করে। দলভিত্তিক পৌর নির্বাচন করার সরকারি সিদ্ধান্তের পর এবার কোনো পৌরসভায় ইভিএমে ভোট করতে পারছে না সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে না আসায় জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা গেল না। সচিব জানান, এখন মনে হয় আর ইভিএম হবে না। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর মতবিরোধ থাকায় নতুন করে এ নিয়ে ঐকমত্যের প্রয়োজন পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। যেহেতু দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচন হবে সেহেতু দলের মতামতও লাগবে। দলগুলো রাজি থাকলে সীমিত করে হলেও করা যেত। সামনে সময়ও কম, দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচন হলে ইভিএম নিয়ে ভোট করা যাবে না, বলেন ইসি সচিব।

ইভিএম নিয়ে ইসিতেই এখন মতবিরোধ : রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ব্যবহৃত একটি ইভিএম যন্ত্রের কারিগরি ত্র“টি সারতে কয়েক দফা সহযোগিতা চাইলে তাতে সাড়া দেয়নি বুয়েট। গত জুনে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক সিইসির কাছে এক ইউও (আনঅফিশিয়াল) নোটে লেখেন, কমিশনে যে ইভিএম রয়েছে তাতে ভোট সংখ্যার কাগজি রেকর্ডের ব্যবস্থা নেই; ভোটারের পরিচিতি শনাক্তকরণেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে এ যন্ত্র দিয়ে ভোটে কারচুপি রোধ করা সম্ভব নয়। অন্য নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী আলাদা এক নোটে বলেন, বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি, যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে সনাতন পদ্ধতিতে হাতে গণনা করে এ বিরাটসংখ্যক ভোট সময়মতো সম্পন্ন করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের জন্য অগ্রসরমান ভারতের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

পৌরসভার তফসিল দিতে ইসির হাতে সময় এক সপ্তাহ : নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেছেন, ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচন করতে হলে তফসিল ঘোষণার জন্য আর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সংশোধিত বিধিমালা দ্রুত হাতে পেতে হবে নির্বাচন কমিশনের। গতকাল নির্বাচন কমিশন কার‌্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আজকের মধ্যে (বৃহস্পতিবার) তফসিল ঘোষণার কথা ভেবিছিলাম আমরা। কিন্তু এখনো আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালার সংশোধন হাতে পেলাম না। এখন ডিসেম্বরে ভোট করতে হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তফসিল করতেই হবে। মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালার ভেটিং করা কপি না পাওয়ায় নতুন করে আইনি জটিলতা নিয়েও শঙ্কা জাবেদ আলীর।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর