শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

১৭ দফতরের বেতন-ভাতায় ইউএনওর স্বাক্ষরে আপত্তি

একক কর্তৃত্ব দেওয়ার দাবি উপজেলা চেয়ারম্যানকে

নিজামুল হক বিপুল

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে হস্তান্তরিত ১৭টি অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা যুদ্ধ। বেতন-ভাতা ও উন্নয়ন বরাদ্দে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৭ দফতরের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, ইউএনও-কে নয়, উপজেলা পরিষদের নির্বাহী প্রধান হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হোক। তাদের অভিযোগ, ইউএনওর হাতে তাদের বেতনভাতাসহ উন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষমতা দেওয়া হলে মাঠপর‌্যায়ে সরকারের উন্নয়নকাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ পুনরায় চালু হওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যানরাও একই দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারের কাছে। তাদের সেই দাবিই এখন সামনে নিয়ে এসেছে বিসিএস ২৬ ক্যাডার।

গত ১৪ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা থেকে জারি করা অফিস স্মারকে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ আইনের তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত উপজেলা পর‌্যায়ে হস্তান্তরিত সরকারের ১৭টি দফতর ও উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমকে অধিকতর কার্যকর করতে পরিষদের হস্তান্তরিত দফতর ও কাজের সঙ্গে যুক্ত উপজেলা ও ইউনিয়ন বা তদনিæপর‌্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবে। এতে বলা হয়, উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের রাজস্ব বাজেট থেকে প্রদত্ত অর্থ পিএল (পারসোনাল লেজার) অ্যাকাউন্টে রক্ষিত হবে এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে এ হিসাব পরিচালিত হবে। শুধু তাই নয়, ওই ১৭টি অধিদফতরের অনুকূলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের উন্নয়ন বাজেট থেকে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য যে থোক বরাদ্দ উপজেলা পর‌্যায়ে রয়েছে, সেই টাকা খরচের ক্ষেত্রেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর যৌথ স্বাক্ষর লাগবে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালনার সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত এ আদেশ জারির পর থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মাঠপর‌্যায়ের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাপন মাঠপর‌্যায়ে পৌঁছানোর আগেই ইউএনওরা এর অপব্যবহার করছেন। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে এর অপব্যবহার আরও বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলছেন, এতে করে মাঠপর‌্যায়ে সরকারের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে। এমনটা মনে করছে ২৬টি ক্যাডারের ফোরাম বিসিএস সমন্বয় কমিটিও। তাদের মতে, এর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদকে ক্ষমতায়নের পরিবর্তে ইউএনওদের ক্ষমতায়নের পাঁয়তারা মাত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ফিন্যানশিয়াল রুল অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা সেলফ ড্রয়িং অফিসার। তারা তাদের বেতন-ভাতা নিজ দায়িত্বে উত্তোলন করবেন। উপজেলায় কর্মরত ১৭টি দফতরের প্রধানরা হচ্ছেন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এ সিদ্ধান্ত সরকারের ফিন্যানশিয়াল রুলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত ১৭টি অধিদফতর-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইউএনওদের দায়িত্বহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কারণ মাঠপর‌্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার যেসব কর্মকাণ্ড হয় তার সঙ্গে ইউএনওদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে দায়বদ্ধ করার পদ্ধতি চালু করার দাবি জানিয়েছিল। কারণ জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছেই জবাবদিহি করার বিধান থাকা উচিত। সরকার যে ১৭টি দফতরকে উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত করেছে সেগুলো হচ্ছেÑ স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর, সমাজসেবা অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, মহিলাবিষয়ক অধিদফতর, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, পল­ী উন্নয়ন বোর্ড, বন অধিদফতর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। এসব অধিদফতরের কোনোটির কাজের সঙ্গেই ইউএনওর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রতিটি অধিদফতরের কাজই আলাদা। অথচ এসব অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে বলে আদেশ জারি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ পুনঃপ্রবর্তনের পর থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা বার বার দাবি করে আসছিলেন যে, উপজেলা পরিষদ আইনের তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৭টি দফতরকে উপজেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা এবং আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে ন্যস্ত করার জন্য। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা। শেষ পর্যন্ত ১৭টি দফতর উপজেলা পরিষদে হস্তান্তর হলেও এখন তাদের আয়-ব্যয়ের বিষয়টি দিয়ে দেওয়া হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর যৌথ স্বাক্ষরে।

সর্বশেষ খবর