শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রচারণায় বিভিন্ন মিশন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি আয় বাড়াতে ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের শুল্ক সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক বিষয় প্রচার করা হবে। আর এ প্রচারণার কাজটি চালাবে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশন। রপ্তানি আয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে বৈদেশিক মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় করতে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত নীতিনির্ধারণী কমিটি এ ধরনের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ৪৯টি দেশে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পায়। সে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা গড়ে তাদের তৈরি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় ওইসব দেশে রপ্তানির সুযোগ পেতে পারেন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশে বিনিয়োগ ও রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পাবে। আর এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্যিক মিশনগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দিতে চাইছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানান, শুল্ক সুবিধাসহ বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে প্রচারপত্র তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)কে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই প্রচারপত্র বিদেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক মিশনগুলোতে পাঠিয়ে দেবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্টের বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির বিষয়টিও প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হবে মিশনগুলোকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া সুবিধা এবং শ্রমিক কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপগুলোও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রচার করা হবে। এদিকে পাটের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইরান ও তুরস্ক সফর করবে। এ ছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পাটের বাজার সম্প্রসারণে চাল, গম, কোকো ও কফি উৎপাদনকারী দেশ যেমনÑ নাইজেরিয়া, ঘানা ইত্যাদি দেশে সম্ভাবনা যাচাই করবে। এ লক্ষ্যে উল্লিখিত দেশগুলোর নাগরিকদের বাংলাদেশে অন এরাইভেল ভিসা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, ইউরোপসহ পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের (শাক-সবজি) চাহিদা রয়েছে। তবে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে আলুসহ কয়েক ধরনের সবজি রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে রাশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে। ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানি নিয়েও বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত এর সমাধানের উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়কে। এ ছাড়া রাশিয়ায় বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে চিংড়ি খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে সুপারিশসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে। রপ্তানি সম্প্রসারণে পণ্যের মানের বিষয়গুলো অনেক সময় বাধা সৃষ্টি করে। আর এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় রপ্তানি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলোতে সমন্বয় তৈরি করতে বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে একই ছাতার নিচে আনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী বলেন, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য, ওষুধ ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এসব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট দেয় একেক সংস্থা। যেমনÑ ব্যবহার্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত বেশির ভাগ পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে বিএসটিআই। আবার শাক-সবজির মান নিয়ন্ত্রণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কিছু কিছু পণ্যের মান নির্ধারণ হয়ে থাকে সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে। ফলে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন দফতরে যেতে হয় রপ্তানিকারকদের। এ সমস্যা মোকাবিলায় দেশের সব মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে একই ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে রপ্তানিকারকরা সহজেই তাদের রপ্তানি পণ্যের মান পরীক্ষা করাতে পারেন।

সর্বশেষ খবর