অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ১৬০ টাকা। তিনি জানান, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া নবায়ন ফি জমা না দেওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৩৩টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ৮ম অধিবেশনে প্রশ্ন-উত্তরপর্বে খ ম জাহাঙ্গীর, কাজী কেরামত আলী (রাজবাড়ী-১) ও কামাল আহমেদ মজুমদারের (ঢাকা-১৪) প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার ফেরত আনা হয়েছে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে কিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলাও হয়েছে। ২০১১ সালের ২৩ জুন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত একটি মামলার রায় ঘোষিত হয়। আদালত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২-এর আওতায় সংশ্লিষ্ট দোষী ব্যক্তিদের ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ও জরিমানা করেন।
মাথাপিছু ঋণ : আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের (পটুয়াখালী-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বর্তমানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ১৬৯ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ১৬০ টাকা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ৮ম অধিবেশনে গতকাল প্রশ্ন-উত্তরপর্বে কামাল আহমেদ মজুমদারের (ঢাকা-১৪) তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।
বিনিয়োগ কমেনি বাড়ছে : নিজাম উদ্দিন হাজারীর (ফেনী-২) এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানান, বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং তারল্য সংকট বৃদ্ধির বিষয়টি সত্য নয়। বরং বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত ছিল ২ হাজার ৫১১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টাকা, যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫ সালের জুন শেষে (সাময়িক তথ্য অনুযায়ী) ৪ হাজার ৩৮৪ দশমিক ৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালের জুনে দেশে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ২৭.৪ শতাংশ, যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে জুন-২০১৫ শেষে জিডিপির ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে তারল্য ১ হাজার ১৬৯ বিলিয়ন : ব্যাংকিং খাতে তারল্য বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তারল্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ২০১১ সালের জুন শেষে ছিল ৩৪০.৭১ বিলিয়ন টাকা। ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২৩.৫১ বিলিয়ন টাকা এবং আগস্ট ২০১৫ শেষে ১ হাজার ১৬৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে।
আমানতের সুদ হার নিম্নমুখী : নূরুন্নবী চৌধুরীর (ভোলা-৩) এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ হারে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকায় আমানতের সুদ হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তফসিলি ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের সুদহার সর্বনিম্ন ১.২ শতাংশ হতে সর্বোচ্চ ১১.২৫%-এর মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানা বাণ্যিজিক ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত রয়েছে।
বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি : আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের (পটুয়াখালী-৩) আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থবছর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা দেশ বা সংস্থার কাছ থেকে ৯১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ৬১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং ২৯ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান। এ সময়ে ডিসবার্সমেন্ট হয়েছে ৬৪ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।