বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিমানের ৯টার ফ্লাইট কয়টায় ছাড়ে

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বিমানের ৯টার ফ্লাইট কয়টায় ছাড়ে

আকাশপথে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে হাজির হন বাংলাদেশ বিমানের যাত্রীরা। ফ্লাইট ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় সকাল ৮টা ৩৫। নির্ধারিত সময় পার হলো। তবু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও কাক্সিক্ষত ফ্লাইটের খোঁজ পেলেন না যাত্রীরা। অবশেষে দুই ঘণ্টা পর খবর এলো, কুয়াশার কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হবে। বিমান কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণার আরও দুই ঘণ্টা পর অর্থাৎ টানা প্রায় চার ঘণ্টা পর বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যায় ফ্লাইটটি। নানা অজুহাতে শিডিউল বিপর্যয়ের এ চিরায়ত দৃশ্য থেকে কোনোভাবেই বের হয়ে আসতে পারছে না রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান। এতে করে প্রতিদিনই যাত্রী হারাচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মহলের সমালোচনা সত্তে¡ও অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের শিডিউল বিপর্যয়। গেল অর্থবছরে আন্তর্জাতিক রুটে লাভের মুখ দেখলেও সেবার মান ধরে রাখতে তেমন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না এ সংস্থা। জানা গেছে, কেবল শিডিউল বিপর্যয়ের কারণেই তাদের উড়োজাহাজ থেকে এরই মধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন গ্রাহকদের বড় একটি অংশ। অন্যদিকে লাগেজ হয়রানি, খাবারের নিম্নমান, ত্র“টিপূর্ণ ও অস্বাচ্ছন্দ্যকর এয়ারবাসসহ অন্যান্য সমস্যা তো আছেই।

গতকাল সিঙ্গাপুর ফ্লাইটের ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, ‘সব সময়ই কোনো না কোনো অজুহাতে বাংলাদেশ বিমান দেরিতে ছাড়ে আবহাওয়ার কথা বলে যখন আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখে, তখন অন্য এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট ঠিকই চালিয়েছে।’ চার ঘণ্টা বিলম্বিত ওই ফ্লাইটের সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন অফিসার আতাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সকালে অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে বিমানটি দেরিতে ছাড়ে। তবে কাঠমান্ডু থেকে অন্য একটি ফ্লাইট আসতে দেরি করায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি। যদিও এর আগে বিমানের জনসংযোগ বিভাগ থেকে সমন্বয়হীন একটি ভিন্ন তথ্য জানানো হয়। জসসংযোগ কর্মকর্তা তাসনিম আকতার জানান, সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বিমানটি ছেড়ে গেছে। জানা গেছে, এভাবেই সারা বছর কোনো না কোনো অজুহাতে বিমানের শিডিউল বিপর্যস্ত হচ্ছে। সড়কপথে বাস-কিংবা ট্রেনের মতোই দেরি করে ফ্লাইট পরিচালনা করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে বিমানের। বাংলাদেশ বিমানে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন বেশ কিছু যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিস্তর সমস্যা সত্তে¡ও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে অনেকে বিমানের উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেন। কিন্তু দিন দিন শিডিউল বিপর্যয় এতই চরমে পৌঁছেছে যে মানুষ বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিমানের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের একটি সূত্র জানায়, হজযাত্রীদের চাপের কারণে প্রায় তিন মাস ধরে লণ্ডভণ্ড ছিল বিমানের শিডিউল। এরপর কয়েক সপ্তাহ কিছুটা শৃঙ্খলাবস্থা বিরাজ করলেও ফের একই অবস্থা। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে। গত মাসেও সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে হাজীদের দুর্ভোগ ও হজ নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনার জন্য বিমানকে দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সমন্বয়হীনতাই এ জন্য দায়ী। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১৮ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয়। অন্যদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি নিজ মন্ত্রণালয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে। একই সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে হাজীদের দুর্ভোগ লাঘব এবং সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র একটি হজ পরিদফতর গঠনেরও সুপারিশ করেন তারা। যাত্রীদের অভিযোগ, বিমানের ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তন হলেও বিষয়টি আগে থেকে তাদের জানানো হয় না। বিমানবন্দরে এসে হুট করেই জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে তারা এত টাকা খরচ করে নিজের বিপদ ডেকে আনতে একদমই নারাজ। এদিকে গতকাল ক্ষোভ নিয়ে একজন ফ্লাইট অপারেশন অফিসার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০-৩০ মিনিট বিলম্ব হওয়াকে আমরা অতটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করি না। এটি হতেই পারে। অন্য এয়ালাইনসের ক্ষেত্রেও হয়। কিন্তু সেগুলো কেউ দেখে না। যত সমালোচনা বাংলাদেশ বিমান নিয়ে। জানা গেছে, বেহাল যাত্রীসেবা, অব্যাহত লোকসান, দুর্নীতি-লুটপাট ও দৈন্যদশা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার পরও রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো পরিবর্তন নেই। এমন অভিযোগের মধ্যেই চলছে নিত্যনতুন বিমান ভাড়া ও ক্রয় বাণিজ্য। সূত্র বলছে, আগামী মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে (বি-৩৭৩) ফের দুটি আস্ত নতুন উড়োজাহাজ আনছে বিমান। এর একটি ইতিমধ্যে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে দেশে পৌঁছার অপেক্ষায়। যদিও এর আগে একাধিকবার বহরে ত্র“টিপূর্ণ উড়োজাহাজ সংযোগের ফলে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয় বিমান কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতিবাজ একটি সিন্ডিকেট নতুন উড়োজাহাজ কেনা বা লিজ নেওয়ার চেয়ে পুরনো বিমান ভাড়া করে আনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ৬ এপ্রিল একযোগে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু হয়েছে। আর ওইদিনই শেষবারের মতো ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক রুটে বর্তমানে লন্ডন, জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম, দোহা, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত, মাসকাট, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, ইয়াঙ্গুন, কাঠমান্ডু ও কলকাতায় বিমানের ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এসব রুটেও প্রতিনিয়ত ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়।

সর্বশেষ খবর