বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মুজাহিদের অপরাধনামা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মুজাহিদের অপরাধনামা

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের অপরাধনামায় সবচেয়ে রোমহর্ষক ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে স্বাধীনতাকামী দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদেও বিরুদ্ধে লড়তে স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করেন। বাহিনীর সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মুজাহিদ ছিলেন আলবদরের সামরিক এবং অর্থনৈতিক মূল চালিকাশক্তি। আলবদর বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল স্বাধীনতাকামী ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া। মুজাহিদের নেতৃত্বে এই আলবদর বাহিনী স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে মুজাহিদ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একাধারে গণহত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন। সে সময় তিনি একাধারে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট এবং রাজাকার বাহিনীর স্থপতি, আলবদর প্রধান ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিচার হয় সাত অভিযোগে। বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে মুজাহিদকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। অপরাধনামা অনুযায়ী একাত্তরে জুনের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুরের রথখোলা গ্রামের রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে খাবাসপুর মসজিদের কাছ থেকে ধরে পুরাতন সার্কিট হাউসে নিয়ে যায় রাজাকাররা। সেখানে উপস্থিত মুজাহিদের ইঙ্গিতে রাজাকার ও অবাঙালিরা হত্যার উদ্দেশে বিহারি ক্যাম্পের পূর্ব দিকে জনৈক আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে নির‌্যাতন করে তাকে। পরে পালিয়ে যান বাবু নাথ। আগস্টের ৩০ তারিখ রাতে মতিউর রহমান নিজামীকে সঙ্গে নিয়ে নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে যান মুজাহিদ। সেখানে আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে গালাগাল করেন তারা। পরে সেখানে অমানবিক নির‌্যাতনের পর মুজাহিদ একজন ছাড়া বাকিদের হত্যা করেন তার সহযোগীদের সহযোগিতায়। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিক্ষা কলেজ) পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দলীয় নেতাদের নিয়ে বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতেন মুজাহিদ। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। ১৩ মে বেলা ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে রাজাকার কালু বিহারি, ওহাব, জালাল ও অন্যান্যের সঙ্গে গাড়িতে করে ফরিদপুরের  কোতোয়ালি থানার খলিলপুর বাজারে শান্তি কমিটির কার‌্যালয়ে যান মুজাহিদ। সেখানে সভার পর সহযোগীদের নিয়ে হিন্দু-অধ্যুষিত বাকচর গ্রামে হামলা চালান তিনি। বীরেন্দ্র সাহা, নৃপেণ সিকদার, সানু সাহাসহ কয়েকজনকে হত্যা করা হয় মুজাহিদের নির্দেশে। রাজাকাররা এ সময় ধর্ষণ করে এক হিন্দু নারীকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর