শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিল পাস, অপেক্ষা শুধু তফসিলের

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতি - কেন্দ্র ও ভোটার তালিকা প্রায় চূড়ান্ত

গোলাম রাব্বানী

বিল পাস, অপেক্ষা শুধু তফসিলের

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পৌরসভা নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (পৌর) আইনের সংশোধনী বিলও পাস করা হয়েছে। এখন শুধু তফসিলের অপেক্ষা। প্রয়োজনীয় বিধিবিধান সংশোধন করে যত দ্রুত সম্ভব পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তফসিল দেওয়ার জোর প্রস্তুতিও চলছে ইসি সচিবালয়ে। ইসির কর্মকর্তাদের রাত-দিন প্রস্তুতির কাজ করতে হচ্ছে। গতকাল সংসদে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) বিল, ২০১৫ পাস হওয়ায় দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে যাচ্ছে ইসি। তবে পৌরসভা নির্বাচনে কারা হচ্ছেন রিটার্নিং অফিসার তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে ইসিতে। ইসি সচিবালয় চাইছে, নিজস্ব কর্মকর্তারাই এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করুক। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে নির্বাচন কমিশন পৌরসভা নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী বিধিমালা-আচরণবিধিসহ প্রয়োজনীয় বিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। জরুরি ভিত্তিতে এসব বিধিবিধান গেজেট আকারে জারির ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা ও কেন্দ্র প্রস্তুত করতে ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির কর্মকর্তাদের জন্য একটি চিঠিও প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের  (সিইসি) অনুমোদন নিয়ে দ্রুত তা মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে পৌরসভার মতো ভবিষ্যতেও সিটি, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদে মেয়র ও চেয়ারম্যান পদ শুধু দল ভিত্তিতে করবে ইসি। আর কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে নির্দলীয়। ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে তফসিল দিয়ে ইসি ২৮-২৯ ডিসেম্বর সম্ভাব্য ভোট গ্রহণের তারিখ রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এবার ৩৪-৩৫ দিন হাতে রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ৩১ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইংরেজি নববর্ষ বরণের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। তাই এর এক দিন বা দুই দিন আগে এ নির্বাচন শেষ করতে চায় ইসি। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এমনকি বিলের খসড়া কপি নিয়ে ইসি প্রয়োজনীয় বিধিমালা সংশোধনের কাজ আগেই এগিয়ে রাখছে। এ ছাড়া নির্দলীয়ভাবে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট পেপার আগেভাগে ছাপানোর জন্য একটি নোট তৈরি করে রাখা হয়েছে। তফসিল ঘোষণা হলেও ইসির নির্দেশ পেলেই তা বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা ভোট আয়োজনের কথা আগে থেকেই বলে আসছে। তবে সংশোধিত আইন ও বিধি হাতে না পাওয়ায় পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে চিন্তায় পড়েছিল ইসি। এ ক্ষেত্রে বিল পাস হওয়ায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তফসিল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটু তো সময় লাগবে। আমাদের বিধিবিধান করতে হবে। এরপর বাকি কাজ।’ দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে এক মাসের বেশি সময়। আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হলেও আইনে আবারও নতুন সংশোধনী এনে বিল পাস করা হয়েছে সংসদে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দেশের ২৪০টিরও বেশি নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার মেয়াদ পূর্ণ হবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারির মধ্যে। হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ২ জানুয়ারি, যা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে চ‚ড়ান্ত করতে চায় কমিশন। ফেব্র“য়ারিতে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। এসব কারণে বিদ্যমান ভোটার তালিকায় ডিসেম্বরকেই পৌর ভোটের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

কেন্দ্র-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মেরামতে চিঠি : নির্বাচন উপযোগী ২৪২ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির এক সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ২৪২টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছোটখাটো মেরামতের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী করতে বলা হয়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে চ‚ড়ান্ত ভোটকেন্দ্র করে গেজেট করার বিধান রয়েছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালার আলোকে দ্রুত সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর