বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সৈকতে রাস উৎসব

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

সৈকতে রাস উৎসব

নির্ঘুম রাত কাটানোর পর বঙ্গোপসাগরের লোনা জলে পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো নর-নারী গঙ্গাস্নান শেষ করেছেন। গতকাল সকালে কুয়াকাটার সৈকতে স্নানের আগমুহূর্তে অনেক মানতকারী মাথার চুল ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিণ্ড দান করেন। পুণ্যের আশায় বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন। দিনভর পূর্ণিমার মধ্যে সৈকতজুড়ে উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠ করে পুণ্যার্থীরা গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও গঙ্গাস্নান উপলক্ষে সৈকতে মেলা  বসেছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সৈকত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মহামিলনমেলায় পরিণত হয়। গঙ্গাস্নান নির্বিঘ্ন করতে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল অব্যাহত ছিল। কলাপাড়া শ্রীশ্রীমদন মোহন সেবাশ্রমের পুরোহিত পরিমলচন্দ্র দাস জানান, প্রতি বছর পূর্ণিমা তিথিতে এ রাসলীলা উৎসব ও মেলা চলে আসছে। দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে এবং দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের লালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৫৫ বছরের ল²ণ রায় স্নান শেষে জানান, ‘দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নান করার। এখানে এসে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভরা পূর্ণিমায় সাগরের জলে পুণ্যস্নান করেছি।’ একই এলাকার সেঁজুতি রানী জানান, ‘আমার ছেলের মাথা ন্যাড়া করার মানত ছিল। কুয়াকাটায় এসে আজ (বুধবার) সকালে মাথা ন্যাড়া শেষে গঙ্গাস্নান করেছি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে খাবারদাবারে। ব্যবসায়ীরা গলাকাটা দাম রাখছেন। তা ছাড়া খাবারের মানও ছিল অত্যন্ত খারাপ। তাই বাধ্য হয়ে ওই খাবার খেতে হয়েছে।’ খুলনা থেকে আসা পুণ্যার্থী মনিকা বালা জানান, ‘এখানে মহিলাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মহিলাদের আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় স্নান শেষে কাপড় পাল্টাতে ভীষণ বিপাকে পড়তে হয়েছে।’ কুয়াকাটা গঙ্গাস্নান ও রাস উৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বিপুল হাওলাদার জানান, ‘অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা উৎসব সফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’ কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান জানান, ‘জেলা পুলিশ, থানা পুলিশ, নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশের সমন্বয়ে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।’ এ বছর কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর