বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি যুবকের বুকে কেন মরণবাদী স্লোগান

আ স ম মাসুম, গ্রিস সীমান্ত থেকে ফিরে

রাতে প্রচণ্ড শীত। গ্রিস-মেসিডোনিয়ার সীমান্ত ক্যাম্প গ্যাবগেলিয়ায় যেখানে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের পদচারণে মুখর, সেখানে কবরের শুনশান! নিভিয়ে ফেলা হয়েছে সব বাতি। তবে ক্যাম্পের বাইরে গ্রিস-মেসিডোনিয়া নো ম্যান্স ল্যান্ডে হাজার হাজার শরণার্থী আটকা। হঠাৎ করেই ১৮ নভেম্বর বুধবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত-যেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের শরণার্থীর ভিড়। শুধু আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকের শরণার্থীদের জন্য খোলা রয়েছে। সেদিন সারা রাত নো ম্যান্স ল্যান্ডে অপেক্ষা করেছেন শত শত শরণার্থী। মশাল জ্বালিয়ে, ক্যাম্প ফায়ার করে শীত নিবারণের চেষ্টার সঙ্গে চলেছে লিবার্টি লিবার্টি বলে স্লোগান। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। শত শত আটকে পড়া শরণার্থীর মিছিল শুধু বড়ই হয়েছে। এক হাজার থেকে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে দিন-রাত। নো ম্যান্স ল্যান্ডে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে চ্যারিটি সংস্থাগুলো। শরণার্থীদের প্রতিবাদ আর স্লোগানের সঙ্গে যোগ হয় শারীরিক প্রতিবাদ। গতকাল বেশ কয়েকজন শরণার্থী মুখে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে বোঝাতে চেয়েছেন, মানবতার কোনো ভাষা নেই! আসলেই কি নেই! মানবতার কি কোনো ধর্ম নেই? মানবতার কি আসলেই কোনো দেশ নেই? যদি তা-ই না থাকে তাহলে মানবতা আজ কেন আটকে আছে নো ম্যান্স ল্যান্ডে? এমন প্রশ্নের উত্তর মানেই রাজনৈতিক সমীকরণে গা ভাসানো। মধ্যপ্রাচ্যে কি হয়েছে সেই রাজনৈতিক সমীকরণে নানা মুনির নানা মত! তাই বৈশ্বিক সেই বিষয় নয়, এখানে এ বিষয়ের ঊর্ধ্বে রয়েছে মানবতা! সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ থেকে যখন শরণার্থীদের ভাগ্যের শিকে খুলে দেয় জার্মানি, এরপর গত তিন মাসে প্রায় সাত লাখ শরণার্থী প্রবেশ করেছেন ইউরোপে। তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে গ্রহণ করে নেয় ইউরোপ। সেই খবরে শরণার্থী নয় এমন লাখ লাখ মানুষ এই ভিড়ে মিশে গিয়ে সুযোগ নিতে থাকেন। যেসব দেশে যুদ্ধ নেই, যেসব দেশে অশান্তি নেই, সেসব দেশের নাগরিকদের ব্যাপারে ইউরোপীয় কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত আসে নভেম্বরের ১৩ তারিখে প্যারিস হামলার পরই।

মূলত প্রকৃত শরণার্থীদের ভিড়ে আইএস ঢুকে প্যারিস হামলা ঘটিয়েছে এমন প্রমাণের পরই ছোট করে আনা হচ্ছে শরণার্থীদের বহর। তাই মেসিডোনিয়ায়ই আটকে দেওয়া হচ্ছে তাদের। আটকে পড়া হাজার হাজার শরণার্থী পরিচয়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের দাবি, তাদের ঢুকতে দেওয়া হোক। কেউ কেউ সুইসাইড করবেন বলেও হুমকি দিচ্ছেন। অনেকের মুখে সেলাই, বুকে রক্ত দিয়ে লেখা স্লোগান। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে সেসব ছবি ছাপা হচ্ছে। সেসব ছবিতে জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের এক তরুণের বুকে রক্ত দিয়ে ইংরেজিতে লেখা-‘আমাদের গুলি করো, তবু আমরা বাংলাদেশে ফিরে যাব না’!

বাংলাদেশ তো সরকারের হিসাবে নিরাপদ। বিশ্বের বড় বড় দেশ বাংলাদেশের ব্যাপারে পজেটিভ। তাহলে টগবগে যুবকের চোখে স্বপ্ন থাকবে, দেশ গড়ার কাজে হাত মেলাবে। সেই যুবকের বুকে কেন শোভা পাবে এমন মরণবাদী স্লোগান!

সর্বশেষ খবর